ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। অন্যজন দেলোয়ার হোসেন রিপনকে রাখা হয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির বাংলানিউজকে জানান, ‘মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে রায়ের অনুলিপি গ্রহণ করে যাচাই-বাছাই শেষে দুই কারাগারের উদ্দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি’।
এর আগে বিকালে রায় কার্যকর করতে বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে রায়ের অনুলিপি কারাগারসহ সাতটি স্থানে পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হাইকোর্ট ও সিলেটের বিচারিক আদালতে রায় পৌঁছাতে রওনা হন বিশেষ বার্তাবাহকেরা।
নিয়ম অনুসারে আপিল বিভাগের এ রায় কারাগারে যাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ আসামিদের অবহিত করবেন। এরপর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সামনে শেষ সুযোগ হিসেবে বাকি আছে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা। এ প্রক্রিয়া শেষেই ফাঁসিতে ঝুলতে হবে তিন জঙ্গিকে।
গত রোববার (১৯ মার্চ) ব্রিটিশ মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে মুফতি হান্নানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এ খারিজাদেশের ০৫ পৃষ্ঠার অনুলিপি মঙ্গলবার সকালে প্রকাশিত হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায় অবগত হওয়ার পর জেল কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসা করবেন, রাষ্ট্রপতির কাছে তারা (মুফতি হান্নানসহ মৃতুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা) প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না। তারা যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান, সে আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। আর যদি না চান, তাহলে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে’।
‘তবে জেলকোড অনুসারে রায় প্রকাশের ০৭ দিনের আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না এবং ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। কাজেই জেলকোড মেনেই সমস্ত আইনি প্রক্রিয়ার পর তাদের বিষয়ে রাষ্ট্র ও জেল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে’।
গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। রায়ে এ বিষয়ে আসামিদের আবেদন খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দাল আপিল না করায় তাদের দণ্ডও বহাল থাকে।
গত ১৮ জানুয়ারি ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আপিল বিভাগের এ রায় যাওয়ার পর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত। গত ০৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে এ পরোয়ানা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পড়ে শোনানো হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেন মুফতি হান্নান ও বিপুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী। আবেদনে ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাসের আরজি জানানো হয়।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।
হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন।
মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন।
প্রায় সাত বছর পর গত বছরের ০৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ০৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ০৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
ইএস/এসজেএ/এএসআর
** রিভিউ খারিজের রায় যাচ্ছে সাত জায়গায়
** এখন শুধু রায় শোনা ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা
** মুফতি হান্নানের রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশ