তিনি হচ্ছেন খুরশীদ আলম খান। আইন পেশায় দুই যুগ পার করা এই আইনজীবী বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিগ্যাল জার্নালিজম থেকে আইন পেশায় আসা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ, দুর্নীতি, আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় ধানমণ্ডি ল’ কলেজ থেকে ল’ পাস করে ১৯৮৭ সালে ঢাকা বারে এবং ১৯৯০ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
একদিন সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশকারী জার্নাল ঢাকা ল’ রিপোর্ট (ডিএলআর) কিনতে গিয়ে সেখানে প্রুফ রিডার ও পরে রিপোর্টার হন। ২০১৩ সালের ১৬ জুলাই থেকে ডিএলআরের সম্পাদক তিনি।
মূলত এ লিগ্যাল জার্নালিজমের মাধ্যমে তার আইন পেশায় আসা জানিয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘ডিএলআরে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। রায় সংগ্রহ করতে গিয়ে রায়ের প্রুপ দেখতাম, হেডনোট নিতাম। এতে আমার সিংহভাগ আইনচর্চা হয়ে গেছে’।
দক্ষ দেওয়ানি আইনজীবী প্রয়াত আলিমুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে থেকে বেশ কিছুদিন তার মামলা পরিচালনা করেছেন খুরশীদ আলম খান। পরে জামিন, বাতিল ও আটকাদেশ (ডিটেনশন) বিষয়ক মামলা পরিচালনা করতে করতে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যান।
এরপর রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে শ’খানেক ডেথ রেফারেন্সের মামলা লড়েছেন। এসব মামলা দেওয়ায় সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুনসুরুল হক চৌধুরীর (পরবর্তীতে বিচারপতি ও বর্তমানে সিনিয়র আইনজীবী) প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব মামলা থেকেও অনেক কিছু শিখেছি’।
খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমাদের দেশে যোগ্য ও দক্ষ বিচারকের স্বল্পতা রয়েছে। যার মেধা আছে, যার মধ্যে আইনি ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা আছে, এমন অনেকেই বেঞ্চে (বিচারকের আসনে) বসতে পারছেন না। মেধা যাচাইয়ের পদ্ধতি থাকলে অনেক বেশি দক্ষ বিচারক পাওয়া যেতো। বিচারাঙ্গন আরও অনেক বেশি উন্নত হতো’।
তিনি মনে করেন, ‘ভালো বিচারক পেতে ভালো আইনজীবী সমিতি (বার) থাকতে হবে। ভালো বার করার একমাত্র দায়িত্ব বার কাউন্সিলের। বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তি অনেক কঠিন হতে হবে। বার কাউন্সিলের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাগুলো সুক্ষ ও দক্ষভাবে হওয়া উচিত। একজন সহকারী জজ হচ্ছেন ১ হাজার ৭০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে কোনো তদবির ছাড়াই। ঠিক একই পদ্ধতিতে বারের আইনজীবী অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। প্রবেশের নিয়ম শক্ত হলে মেধাবীরা বারে আসবেন। এতে বার উন্নত ও প্রজ্ঞাবান হবে। তাহলে জুডিশিয়ারির চেহারাও পাল্টে যাবে’।
‘উচ্চ আদালতের জামিন জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অসাধুতা সরাতে রিট, ফৌজদারি বিবিধ ও দেওয়ানিসহ প্রত্যেক বিভাগে একজন করে প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকা দরকার। তাহলে দুর্নীতি ৯০ শতাংশ কমে যাবে। এটা সম্পূর্ণ প্রশাসন ক্যাডারে নিয়ে যেতে হবে। বেঞ্চ অফিসার হতে হবে জুডিশিয়াল অফিসার। তাহলে রায় সংক্রান্ত কাজগুলো স্বচ্ছ ও সুচারু হবে। ভুল-ভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে’।
১/১১ এর সময়ে ২০০৭ সালের ২০ মে দুদকের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পান খুরশীদ আলম খান। তিনি হাইপ্রোফাইল দুর্নীতির মামলাগুলো পরিচালনা করছেন ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগেও অনেক নজির সৃষ্টি করেছেন। সে নজিরের কারণে দুর্নীতির মামলগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ সচল হয়েছে।
খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমি কাউকে ভয় পাই না, এটি আমার গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট। নিজের অবদান কি-না জানি না, তবে প্রচণ্ড চেষ্টা করে একটি জায়গায় কমিশনকে নিয়ে এসেছি’।
‘দুদকের বর্তমান সফলতা ৫০ শতাংশ। তবে কিছু ব্যর্থতাও আছে। যেমন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করতে না পারা। তবে এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে যদি আর ১০ বছর চলে, তাহলে দুদকের সফলতা শতভাগে পৌছাবে। এজন্য সঠিক নেতৃত্ব থাকতে হবে, যাদের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকে’।
খুরশীদ আলম খানের বড় ছেলে লন্ডনে ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ে অনার্সে অধ্যয়নরত। ছোট ছেলে এ-টু পরীক্ষা শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকিনসন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়তে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। স্ত্রী এক সময় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে অধ্যাপনা করতেন, বর্তমানে গৃহিণী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর