ওই দুই মামলার ডেথ রেফারেন্স আদেশের জন্য কার্যতালিকায় আসার পর বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগের আদেশের সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামাল উদ্দিনের পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, জামাল উদ্দিন আত্মসমর্পণ করেছেন।
নির্ধারিত সময়ের পরে আপিল করা আবেদনটি মঞ্জুরের জন্য হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চের তালিকায় আছে। তখন আদালত বলেন, আবেদনটির শুনানি আজকে হবে? জবাবে আইনজীবী বলেন, আজকে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ অবস্থায় কি করা যায় এ বিষয়ে আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির কাছে জানতে চান।
জবাবে জহিরুল হক বলেন, সময় দেওয়া যেতে পারে। ওনারা আদেশ নিয়ে আসুক। তখন আদালত বলেন, এটা সেনসেশনাল মামলা। এসব মামলায় সময় দেওয়া যায় না। আজকে বৃহস্পতিবার। এ মামলা আবার সোমবারের কার্যতালিকায় আসবে।
পরে আব্দুর রাজ্জাক জানান, ১৩ এপ্রিল আসামি জামাল উদ্দিন আত্মসমর্পণ করেছেন। ১৫ এপ্রিল আপিল করেছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের থেকে ৯০ দিন বেশি পার হয়ে গেছে। এখন বিলম্ব মার্জনার আবেদন হাইকোর্টের ১৫ নম্বর কোর্টে বিচারাধীন। তাই আমরা আজ বলেছি, জামাল উদ্দিনকে পলাতক না দেখাতে। আমি ওনার পক্ষে আইনজীবী থাকবো। এরপর আদালত আদেশের জন্য সোমবার দিন রেখেছেন।
এর আগে ওই আদালতের কার্যতালিকায় এক ও দুই নম্বর ক্রমিকে আদেশের জন্য উঠে ডেথ রেফারেন্স। গত ১৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর সাত খুনের দুই মামলার রায়ে নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্ত হওয়া তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত।
এ মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এরপর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা মামলার সব নথি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়।
এরপরই বিজি প্রেস পেপারবুক প্রস্তুত করে ০৭ মে হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে হাইকোর্টে নিয়মিত আপিল ও জেল আপিল করেছেন প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং র্যা ১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা।
আপিল করেছেন র্যাবের চাকরিচ্যুত হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা ও সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর।
নূর হোসেনের ৬ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী ও জামাল উদ্দিন সরদারও হাইকোর্টে আপিল করেছেন।
পরে গ্রেফতার হন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত র্যাবের চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট এনামুল কবির। আপিল করেননি গ্রেফতারকৃত ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া ও আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেনও।
মৃত্যুদণ্ড ৭ পলাতক আসামিও আপিল করেননি। তাদের মধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এমন ৪ জন এখনও পলাতক।
তারা হলেন- সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম। আর মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক নূর হোসেনের তিন সহযোগী হচ্ছেন- ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান।
বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জনও র্যা বের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল (পরে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌ-থানায় কর্মরত) হাবিবুর রহমানকে ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহী নুরুজ্জামানকে ১০ বছর এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
তাদের মধ্যে পলাতক ২ জন হচ্ছেন- র্যা বের চাকরিচ্যুত কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান ও এএসআই কামাল হোসেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।
সাত খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
ইএস/এসএইচ