বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দিতে গিয়ে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৭ম দিনের মতো এ আপিল শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে।
আগের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে আদালতে রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘তোরে জজ বানাইছে কেডা’- পত্রিকায় এ রকম দেখেছি। যারা সংসদে দাঁড়িয়ে এ রকম কথা বলেন, তাদের হাতে এটা (বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা) ছেড়ে দেবেন? তখন জুডিশিয়ারির স্বাধীনতা থাকবে?’
সংসদে বিচারপতিদের নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের জজ নিয়ে সংসদে আলোচনার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এমপিরা আলোচনা করেছেন। কিন্তু স্পিকার টু শব্দ করেননি। বলছি না, আপনাদেরও (বিচারপতিরা) ত্রুটি নেই, দোষে গুণে মানুষ। যে রায়ের (ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়) কথা বলছি, সেখানে দু’টি শব্দ বাদ দিয়ে দেবেন, আশা করছি’।
বিচারপতিদের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সবচেয়ে ক্লাসে হচ্ছেন আপনারা। শিক্ষা-দীক্ষায় আর সম্মানে আপনারা ক্লাসে। আপনাদের সম্মান থাকবে না? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে না? তারা (সংসদ সদস্যরা) আপনাদের নিয়ে এ রকম মন্তব্য করেন’।
‘সিভিল সার্ভিসের ব্যক্তিদের কারা অপসারণ করেন? পুলিশ সদস্যদের কারা করেন? সেক্রেটারিদের কারা করেন? আপনি? সংসদ? কেউ না। তাদের উপরস্থরা রিমুভ করেন। অর্থাৎ সহকারী সচিবদের তদন্ত করেন যুগ্ম সচিবরা। পুলিশের করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। মিলিটারিদেরটায়ও তাদের ডিসিপ্লিনারি আছে। তাহলে আপনাদেরটা কেন পার্লামেন্টে যাবে? সচিব, পুলিশ তো সংসদে যাচ্ছে না, তাহলে এটি কেন?’
রোকনউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল না থাকলে এখানে অরাজকতা হবে। আর এটি (ষোড়শ সংশোধনী) যদি হয়ে যায়, তাহলে হাইকোর্টের জজদের তো আপনি (প্রধান বিচারপতি) কিছু বলতে পারবেন না। তারা যদি বেলা ১১টায় আসেন, তখনও কিছুই বলতে পারবেন না। অথবা খাসকামরায় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যখন কথা বলবেন, তখন সংসদ কি দেখবে? এটা সংসদ জানবেও না। তাকে কে জানাবে?’
গত ০৮ মে থেকে বুধবার পর্যন্ত আপিল শুনানির ৬ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন আপিল আবেদনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং রিট আবেদনের পক্ষে মনজিল মোরসেদ। শুরুতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় পড়ে শোনান মুরাদ রেজা।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ০৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এ রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
এর মধ্যে গত বছরের ২৫ এপ্রিল অসদাচারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
গত ০৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।
মার্শাল প্রক্লামেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে।
বাংলদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭,
ইএস/এএসআর