রোববার (২৩ জুলাই) বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে সোমবার (২৪ জুলাই) পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
আদালতে ওসির পক্ষে শুনানি করেন শাহরিয়া কবির বিপ্লব। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম খালেদ ও মো. কায়সার জাহিদ ভূঁইয়া।
আদালতকে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মো. কায়সার জাহিদ ভূঁইয়া বলেন, আখাউড়ার বাসিন্দা আজাদ হোসেন ভূঞার হজে যাওয়ার কথা ছিলো ১৮ বা ২৯ জুলাই। কিন্তু গত ২০ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পুলিশি প্রতিবেদনে তাকে ‘মৃত’ বলে দেখতে পাওয়া যায়।
ওসির আইনজীবী শাহরিয়া কবির বলেন, পুলিশ সুপার মোট ১৯৯ জনের পুলিশি প্রতিবেদনের জন্য আখাউড়ার ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদারের কাছে পাঠান। ওসি ১০ জন এসআই ও একটি ফাঁড়িকে দায়িত্ব দেন। সবাই লিখিত রিপোর্ট দিলেও এসআই আবুল কালাম আজাদ টেলিফোনে কম্পিউটার অপারেটরকে প্রতিবেদন দেন। যেখানে একজন মৃত ও আরেকজনের বিষয়ে দু’টি মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু অপারেটর যার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তার স্থলে মৃত ব্যক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনি এ মামলায় লড়বেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি’।
পরে আদালত রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী এম খালেদের কাছে বিষয়টি জানতে চান। তখন খালেদ বলেন, পরবর্তীতে পুলিশ একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। যেটি হজযাত্রী আজাদ হোসেন ভূঞার অনুকূলে নয়। ওখানে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা আছে। একটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। অন্যটিতে জামিনে আছেন।
এ সময় আদালত জানতে চান, তিনি হজে যেতে পারবেন কি-না? জবাবে এম খালেদ বলেন, প্রতিবেদন অনুকূলে আসেনি। তাই পারবেন না।
এ পর্যায়ে আদালতের জিজ্ঞাসায় শাহরিয়া কবির বলেন, ওই ব্যক্তির বিষয়টি দৃষ্টিতে আসার পর গত ০৪ জুলাই তার আরেকটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়েছে, তার নামে দু’টি মামলা আছে। পরে মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটে সেটি (মৃত না থাকার বিষয়ে) সংশোধন করে।
এ সময় আদালত ওসির আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মামলার বিষয়ে বিস্তারিত নেই কেন? পুলিশ তো জানেই না, তিনি মামলায় খালাস বা জামিন পেয়েছেন। আর আদালত জানতে চেয়েছেন, তিনি জীবিত না মৃত? সেটিও তো আপনারা নির্দিষ্ট করে বলেননি। আপনারা শুধু ব্যাখ্যাই দিয়ে যাচ্ছেন। কনস্টেবল দেখাচ্ছেন, পুলিশ সুপার দেখাচ্ছেন। ওসির কাছে কোনো আপডেট তথ্য নেই। যিনি তার এলাকার লোকের খবর জানেন না, তার থাকার কোনো দরকার আছে? তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত’।
এর জবাবে আইনজীবী নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে সোমবার প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপনের জন্য সময়ের আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। সোমবার ওসিকেও ফের আসতে হবে।
তাকে ‘মৃত’ দেখানোর বিষয়ে সম্প্রতি রিটটি দায়ের করেন আজাদ হোসেন ভূঞা। এ রিটের শুনানি নিয়ে গত ১৭ জুলাই ওসিকে তলব করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। আদেশে ২৩ জুলাই হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
রুলে পুলিশি প্রতিবেদনে জীবিত ব্যক্তিতে মৃত দেখানো কেন বেআইনি হবে না- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) ও আখাউড়া থানার ওসিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ আদেশ অনুসারে রোববার হাইকোর্টে হাজির হন ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩,২০১৭
ইএস/বিএস/এএসআর
** হাইকোর্টে আখাউড়ার ওসির নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা