ওইদিন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শফিউল আজমের খাসকামরায় কেবলমাত্র ৫ আসামি এবং উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য দেবেন বাদিনী।
সোমবার (২৪ জুলাই) ক্যামেরা ট্রায়ালের দিন ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষের আবেদনে পিছিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।
গ্রেফতারকৃত মামলার ৫ আসামি আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম ও সাদমান সাকিব এবং দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
সকালে বাদিনী হাজির হলে তার আইনজীবী বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট ফাহমিদা আক্তার রিংকি ক্যামেরা ট্রায়ালের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন মঞ্জুরের পর বিচারকের খাসকামরায় রুদ্ধদ্বার কক্ষে এর প্রস্তুতি শুরু হয়।
এ সময় মামলার অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হবে উল্লেখ করে সময়ের আবেদন জানান আসামিদের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু। এ আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১৩ জুলাই ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে মামলার বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞাসা করা হলে নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন তারা।
আসামিদের মধ্যে সাফাত ও নাঈমকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় সরাসরি ধর্ষণ এবং সাদমান, রহমত ও বিল্লালকে ওই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতায় অভিযুক্ত আনা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেবেন মোট ৪৭ জন সাক্ষী।
গত ০৭ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
গত ১১ জুন সিএমএম আদালত থেকে মামলাটি বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়। গত ১৯ জুন মামলার চার্জশিট আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ০৬ মে বনানী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
তরুণীদের একজনের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই শিক্ষার্থীর বন্ধু। ঘটনার দিন গত ২৮ মার্চ আসামি সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান ওই দুই ছাত্রী।
এরপর ওইদিন রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত তাদেরকে আটকে রাখেন আসামিরা। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যান আসামিরা।
আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ একাধিকবার তাদের ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের সময় আসামি সাফাত গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করান। পরে বাসায় দেহরক্ষী রহমতকে পাঠিয়ে তাদের ভয়-ভীতি দেখান।
ভয়ে ও লোক-লজ্জার কারণে এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
মামলার ৫ দিন পর গত ১১ মে আদালতে জবানবন্দি দেন ওই দুই তরুণী। ওইদিনই সিলেট থেকে প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে, ১৬ মে রাতে পুরান ঢাকা থেকে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলীকে এবং ১৮ মে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে নাঈম আশরাফকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
৫ আসামির মধ্যে রহমত আলী ছাড়া বাকি সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
এমআই/এএসআর
** বনানীর ধর্ষণ মামলায় বাদিনীর ক্যামেরা ট্রায়ালের আবেদন