নথির সঙ্গে একটি ব্যাখ্যাও জুড়ে দেন বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসেন।
ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আদালতের কার্যপ্রণালী শেষে এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় এসে শুনি ইউএনও সাহেবের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে মর্মে অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।
নথি চাওয়া ও প্রাপ্তি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ বাংলানিউজকে বলেন, বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসেন এর পাঠানো নথি সুপ্রিম কোর্টে পৌছেছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম এর তত্ত্বাবধানে পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসেন এর ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়, ‘এ মামলার শুনানিকালে ফরিয়াদি ওবায়দুল্লাহ সাজু এবং তার পক্ষে উপস্থিত থাকেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো.ইউনুস (আদেশ প্রদানের পূর্বে এজলাস ত্যাগ করেন), সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ,জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ আবদুল কাদের, অ্যাডভোকেট আনিছ উদ্দিন আহম্মদ শহীদসহ ৫০-৭০ জন আইনজীবী। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান। ’
‘শুনানি চলাকালে আদালত কক্ষ যেমন আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিলো, তেমনিভাবে আদালতের বারান্দা এবং সংলগ্ন রাস্তায় উৎসুক জনসাধারণসহ মিডিয়া কর্মীবৃন্দের উপস্থিতিতে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান ছিলো। ’
‘শুনানি চলাকালে উৎসুক জনসাধারণের রোষানল হতে ইউএনও সাহেবের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য শুনানি মুলতুবি করি এবং ইউএনও সাহেবের আইনজীবীর নিবেদন মোতাবেক কাগজাত (প্রয়োজনীয় নথি) দাখিল করতে বলি এবং আরও মৌখিক আদেশ দেই যে, কাগজাত দাখিলের পরে পুনরায় শুনানি হবে। আমি তখন ইউএনওকে আদালত কক্ষে বসাতে বলি। ’
‘আদালতে কর্তব্য পালনরত পুলিশ সদস্যগণ ইউএনওর সার্বিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সাধ্যমত চেষ্টা করেন। ইউএনও সাহেবকে আদালতের ডক হতে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে আদালতের কক্ষে বসানোর জন্য আদালত কক্ষের এক দরজা দিয়ে বাহির হয়ে বারান্দা ব্যবহার করে অন্য দরজা দিয়ে আদালত কক্ষে আনতে হয়েছে। এই সময়ে মিডিয়ার কর্মীবৃন্দ বা অন্য কেহ কোন ছবি তুলেছেন কিনা তা অবলোকন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই সময়ে কি সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তাও আমি বিচারকার্য পরিচালনাধীন থাকায় জানতে পারিনি। ’
‘অতপর ইউএনও সাহেবের পক্ষে কাগজাত দাখিল হলে এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির অবসান হলে জামিনের দরখাস্ত এবং দ্যা কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮, এর ২০৫ ধারার দরখাস্ত আইনানুগ প্রক্রিয়া পালনপূর্বক মঞ্জুরক্রমে স্ব-সম্মানে জামিন প্রদান করা হয়। আমি ইউএনও সাহেবের আদালত কক্ষ ত্যাগের পরে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি পরিহারের জন্যই তৎক্ষণাৎ জামিনের দরখাস্তের আদেশ না দিয়ে কাগজাত দাখিল হলে শুনানি অন্তে আদেশ দিব বলে উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। ’
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীদের আঁকা চিত্রকর্ম ব্যবহার করে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র তৈরি করেন আগৈলঝড়ার ইউএনও গাজী তারিক সালমন। এ নিয়ে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ সাজু কার্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি ‘বিকৃত’ করে উপস্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে ৭ জুন মানহানির মামলা করেন।
পরবর্তীতে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তারিক সালমনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করা হয়। সে অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই বুধবার ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করলে প্রথমে জামিন নামঞ্জুর হয়। কিছুক্ষণ পরে তার জামিন মঞ্জুর হয়।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হলে সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। রোববার সকালে সাজু তার মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
ইএস/জেডএম