ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে দণ্ড কমানো ১১ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
‘পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে দণ্ড কমানো ১১ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত’ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: হাইকোর্টের রায়ে সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় তাদের বিষয়ে আপিল করা হবে কি-না- সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কখা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

বিকেলে দেওয়া সাত খুনের দুই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে প্রধান ৪ আসামিসহ ১৫ জনের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে অন্য ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ মামলার মোট ৩৫ আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডও বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।  

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা  প্রধান ৪ আসামি হচ্ছেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা।

অন্য যে ১১ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রয়েছে, তারা হলেন- ৠাবের চাকরিচ্যুত সাবেক হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী,  কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন মুন্সী, আলামিন শরীফ ও তাজুল ইসলাম পলাতক।

অন্যদিকে সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি হচ্ছেন- ৠাবের চাকরিচ্যুত সাবেক সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর ও সার্জেন্ট এনামুল কবির এবং নূর হোসেনের ৯ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী, জামাল উদ্দিন সরদার, ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান। তাদের মধ্যে সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান পলাতক।

বিচারিক আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জনও র্যাবের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল (পরে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌ-থানায় কর্মরত) হাবিবুর রহমানের ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহী নুরুজ্জামানের ১০ বছর করে এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিন ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে উচ্চ আদালতে। তাদের মধ্যে মোখলেসুর রহমান ও কামাল হোসেন পলাতক।

সব মিলিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জনের মধ্যে কারাগারে আছেন ২৭ জন আর পলাতক ৮ জন।

২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা ২০ জন নিয়মিত ও জেল আপিল করেন। পলাতক অন্য ৬ আসামি আপিল করেননি। আপিলগুলোর আংশিক মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।

মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে যেটা দেখতে পাচ্ছি, মূল হোতা যে চারজন ছিলেন, তারাসহ বরখাস্তকৃত মেজর আরিফের টিমে যারা ছিলেন মাইক্রোবাসে- তাদের সকলেরই ফাঁসি বহাল রয়েছে। বস্তা তৈরিতে অর্থাৎ বালুর বস্তা তৈরির টিমে ছিলেন যে ৬ জন- তাদের মধ্যেও ৩ জনের ফাঁসির রায় হয়েছে। একজনের হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দুইজনের সাত বছরের কারাদণ্ড। নূর হোসেনের টিমে যারা ছিলেন- তাদের সকলেরই যাবজ্জীবন হয়েছে, নূর হোসেনের ফাঁসির রায়ও বহাল রয়েছে। রানার টিমে যারা ছিলেন- তাদের সবাইকে অর্থাৎ ৭ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে’।

‘আরেকজন ছিলেন আশরাফুজ্জামান, যিনি ইঞ্জেকশন যোগাড় করে দিয়েছিলেন, নিম্ন আদালতে তার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল- তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালত ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। এটিকে একটি দৃষ্টান্তমূলক রায়ই বলবো আমি। আমরা স্বস্তি অনুভব করছি’।

‘অপরাধ যে কোনো লোক করতে পারেন- সেটি বাহিনীর হোন, কিংবা উচ্চপদে আসীন কোনো ব্যক্তি হোন। কিছু অপরাধীর জন্য কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা ঠিক হবে না’- মন্তব্য অ্যাটর্নি জেনারেলের।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।

সাত খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ করে গত ১৬ জানুয়ারি নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। ৩৫ জন আসামির বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।