ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘দুদকে দুর্নীতিবাজ ক্যান্সার থাকলে ছেঁটে ফেলুন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
‘দুদকে দুর্নীতিবাজ ক্যান্সার থাকলে ছেঁটে ফেলুন’

ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) যদি দুর্নীতিবাজ থাকে তাহলে সেসব দুর্নীতিবাজ ‘ক্যান্সার’গুলোকে ছেঁটে ফেলতে বলেছেন হাইকোর্ট।

সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলার ‘ভুল আসামি’ জাহালমের বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা স্বতপ্রণোদিত রুলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ ।
 
পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের মনোভাব দুদক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

 
 
আদালত তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দুদকে যদি কোনো দুর্নীতিবাজ থাকে তাহলে তাকে বাদ দিন। এই জায়গাটিতে দুর্নীতিবাজ থাকা উচিৎ না। আমাদের কথা হচ্ছে দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা। আমরা চাই স্বাধীন এই সংস্থাটি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করুক।

পড়ুন>>২০১৭ সালের আগের ডিএজি-এএজিদের পদত্যাগের নির্দেশ
 
আদালত আরও বলেন, এখন দেশে অর্থনীতির স্বর্ণযুগ চলছে। তাই এখন আর্থিক অপরাধ হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। সরকার দুদককে অনেক পাওয়ার দিয়েছে। তাই সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দুদককে কাজ করতে হবে। দুদক শক্তিশালী না হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না। দুদকে যদি দুর্নীতিবাজ থাকে তাহলে সেসব দুর্নীতিবাজ ক্যান্সারগুলোকে ছেঁটে ফেলুন।
 
গত জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।
 
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতিকে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেছেন আদালত।

পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চেয়েছেন। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করেন।

পরে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়।  

এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট গত ১৭ এপ্রিল জাহালম কাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছেন। এর মধ্যে এর মধ্যে দুদকের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টে জাহালম বিষয়ক সুয়োমুটো (স্বতঃপ্রণোদিত রুল) রুলের শুনানি ১৩ মে পর্যন্ত স্থগিত করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।

ওই সময় দুদকের যুক্তি ছিলো, যে বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে রুল দিয়েছেন, সে বেঞ্চের দুদক সংক্রান্ত মামলা শুনানির এখতিয়ার নেই। দুদকের জন্য আলাদা বেঞ্চ আছে। তখন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টে মামলার কার‌্যক্রম স্থগিত করেন। পরে ১৩ মে সে স্থগিতাদেশ তুলে দেন আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগের ওই আদেশের পরে বৃহস্পতিবার এ বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে জাহালম নিয়ে দুদকের করা আভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট আগামী ১১ জুলাই আদালতের দাখিলের নির্দেশ দেন।

জাহালম নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না…আমি নির্দোষ। ’ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না। ’
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।