বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নোমান সাক্ষ্য দেন।
আসামিপক্ষের ৯ আইনজীবী তাকে জেরা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, বাদীসহ তিন জনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হয়। বাদীর আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৩০ জুন বাদীসহ নুসরাতের দুই সহপাঠীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। বাদীকে আসামিপক্ষের ৯ আইনজীবী জেরা করেন। বাকি সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার দিন ৩০ জুন ধার্য করেছেন আদালত। ওই দিন ৭ আইনজীবী জেরা করবেন বাদীকে। আইনজীবীর মাধ্যমে সব আসামি জামিন আবেদন করলে আদালত এ বিষয়েও শুনানির জন্য ৩০ জুন পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ২০ জুন আদালত নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান এবং নুসরাতের দুই সহপাঠী নিশাত ও ফুর্তিকে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তলব করেন।
গত ২৯ মে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠাসংবলিত নথি ও চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর গত ৩০ মে মামলার ধার্য তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি না করে ওই মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ১০ জুন মামলার শুনানির দিন ধার্য্য করেন। পরে ১০ জুন আদালত চার্জশিট আমলে নিয়ে ২০ জুন চার্জ গঠন করেন। ওই দিন বাদীসহ তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৭ জুন দিন ধার্য করেন আদালত।
চার্জশিটে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার (বরখাস্ত) অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
এদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আব্দুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আব্দুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, ইমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার উদ্দিন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যায় নুসরাত।
এ ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএ/