ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ফেনীর ৪ সাংবাদিককে গ্রেফতার-হয়রানি না করার নির্দেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৯
ফেনীর ৪ সাংবাদিককে গ্রেফতার-হয়রানি না করার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের ফাইল ছবি

ঢাকা: ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পর প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারের রোষানলের শিকার নয় মামলার আসামি ফেনীর চার সাংবাদিককে চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার বা হয়রানি না করতে বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) নির্দেশ দেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এ দিন আদালতে আসামিদের জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, মহসিন কবির, আজিজুর রহমান ও এসএম সালেহ আহমেদ।

অভিযোগ উঠেছে, নুসরাত হত্যার রহস্য উদঘাটন ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা তুলে ধরতে সক্রিয় ভূমিকার কারণেই এসপি জাহাঙ্গীর অনৈতিকভাবে ‘খেদ মিটিয়েছেন’ পেশাদার সাংবাদিকদের ওপর।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন ওই প্রতিষ্ঠানের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত। সেদিনই স্থানীয় জনতা অধ্যক্ষকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তবে মামলা প্রত্যাহার করতে নুসরাত ও তার পরিবারকে হুমকি-ধামকি দেন অধ্যক্ষের সহযোগীরা। একপর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগ মুহূর্তে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল মৃত্যু হয় নুসরাতের।
 
প্রথমে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করেন সোনাগাজী মডেল থানার প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার) মোয়াজ্জেম হোসেন। তার পক্ষে অবস্থান নেন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার। ঘটনাটি নিয়ে যখন দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম সরব হয়, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নুসরাতের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারে নির্দেশ দেন, তখনও বিস্ময়কর নির্লিপ্ততা দেখান এসপি জাহাঙ্গীর সরকার। সোনাগাজীতে পর্যন্ত যাননি তিনি।

মামলায় সিরাজ উদ-দৌলাসহ কয়েকজনকে আসামি করতে এসপি-ওসি টালবাহানা করেন বলে নুসরাতের পরিবারের পক্ষ থেকে তখন অভিযোগ ওঠে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ সদরদপ্তরেও তিনি (এসপি) ওসির পক্ষে সাফাই গেয়ে চিঠি লিখেন। তাদের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা প্রকাশ পেলে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের পর ঘটনায় জড়িতরা একে একে গ্রেফতার হতে থাকেন। বেরিয়ে আসে ঘটনার মূল রহস্য। একপর্যায়ে পুলিশ সদরদপ্তরের তদন্তে এসপি-ওসিসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হন। ওসি মোয়াজ্জেমকে বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। আর এসপি জাহাঙ্গীর সরকারকে প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয় পুলিশ সদরদপ্তরে। অপর দুইজনকেও প্রত্যাহার করে পার্বত্য এলাকায় সংযুক্ত করা হয়।

জেলা পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এসপি জাহাঙ্গীর ফেনী ছাড়ার আগে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এ সময় তিনি এ ঘটনায় তাকে নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন সাংবাদিককে হেনস্থা করার পরিকল্পনা নেন। তাদের নাম সংবলিত একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের ধরিয়ে দেন। বিভিন্ন তদন্তাধীন মামলায় সেই সাংবাদিকদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। কয়েকজন ওসি কৌশলে এড়িয়ে গেলেও অন্যদের এসিআর আটকে রাখার ভয় দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিলের জন্য চাপ দেন এসপি জাহাঙ্গীর সরকার। ১২ মে সন্ধ্যায় তার বদলি আদেশ আসার পর তিনি রাতে জরুরি ভিত্তিতে ওসিদের ডেকে চাপ প্রয়োগ করে কয়েকটি চার্জশিট তৈরি করান এবং পরদিন তা দাখিলে বাধ্য করেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ওসি জানান। এমনকি বিষয়টি গোপন রাখতেও কোর্ট পরিদর্শকসহ অন্যদের নির্দেশ দেন তিনি।

সাংবাদিকদের যেসব মামলায় জড়ানো হলো:
ছাগলনাইয়া থানায় ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর ও ২৬ ডিসেম্বর, দাগনভূঁইয়া থানায় ২৭ ও ২৯ অক্টোবর, ফেনী মডেল থানায় ২,৭ ও ৮ সেপ্টম্বর এবং সোনাগাজী থানায় ৯ ফেব্রুয়ারি ও ১১ অক্টোবর করা মামলায় জড়ানো হয় সাংবাদিকদের। এসব মামলার অধিকাংশতেই বাদী পুলিশ।

সাংবাদিকরা হলেন, দৈনিক ফেনীর সময় ও সাপ্তাহিক আলোকিত ফেনীর সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, দৈনিক অধিকার প্রতিনিধি ও অনলাইন পোর্টাল ফেনী রিপোর্ট’র সম্পাদক এসএম ইউসুফ আলী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সোলায়মান হাজারী ডালিম এবং দৈনিক সময়ের আলো প্রতিনিধি ও দৈনিক স্টার লাইনের স্টাফ রিপোর্টার মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৯
ইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।