বুধবার (০২ অক্টোবর) সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। পরে সাক্ষীদের জেরা করেন ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহমেদ।
এসময় মামলার একমাত্র আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন ও বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ জুলাই আদালত আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অভিযোগ গঠন করেন। এছাড়া ১৭ জুলাই আইনজীবী ফারুক আহম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনকে নির্দোষ দাবি করে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫ (গ) ধারায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদনসহ জামিনের আবেদন করেছিলেন। তখন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সুমন ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম শামীম এর বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের শুনানি শেষে বিবাদীপক্ষের উভয় আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
মোয়াজ্জেম হোসেনের অব্যাহতির আবেদনে বলা হয়, বাদী ক্ষতিগ্রস্ত নন। এছাড়া মামলায় ঘটনার সময় এবং ভিডিও ধারণের সময় উল্লেখ নেই। আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনের মোবাইল থেকে তা প্রচার করা হয়নি। তবে ভিডিও করা হয়েছে। পরে তা থানা থেকে চুরি হয়ে গেছে।
এ দিন শুনানি শেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগ গঠন করেন মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত।
এর আগে ১০ জুলাই মোয়াজ্জেম হোসেনের অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আসামিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে না পারায়, তা পিছিয়ে ১৭ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এর আগে ৯ জুলাই বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
চলতি বছরের ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ১৭ জুন তাকে ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ওইদিনই ফেনী সোনগাজী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম মোয়াজ্জেমকে আদালতে হাজির করে। পরে জামিন আবেদন করলে নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর গত ২৪ জুন এক আবেদনে ট্রাইব্যুনাল কারাবিধি অনুযায়ী তাকে ডিভিশন দেওয়ার আদেশ দেন। কারাবিধি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে মর্যাদা ভোগ করছেন তিনি।
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘অসম্মানজনক’ কথা বলায় ও তার জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৩০ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ২৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানার পক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। একইদিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৭ জুন দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিনই তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বাদীসহ ১৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনাগাজী থানার চার পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। ‘নিয়ম না মেনে’ জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দু’জন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগ মুহূর্তে বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
ওইদিন নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৯
টিএ