ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

তদন্ত করতে পারবেন না নাটোর সিআইডির পরিদর্শক নয়ন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
তদন্ত করতে পারবেন না নাটোর সিআইডির পরিদর্শক নয়ন

ঢাকা: ছোট ভাই হত্যা মামলায় ১২ বছরের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ‘জোর জবরদস্তি করে’ স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার অভিযোগের ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা নাটোর সিআইডির পরিদর্শক নয়ন কুমার আপাতত কোনো তদন্ত কার্যক্রম চালাতে পারবেন না।

সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এ সময় মামলাটির সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সারিয়াকান্দির উপপরিদর্শক ও বর্তমানে নাটোরে সিআইডির পরিদর্শক নয়ন কুমার আদালতে হাজির ছিলেন। আর বগুড়া থেকে আদালতের কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক মো. মনসুর আলী।

বগুড়ার কাটাখালীতে মহিদুল ইসলামের আট বছরের ছোট ছেলে হত্যা মামলায় ১২ বছরের বড় ছেলের ‘জোর করে স্বীকারোক্তি’ নেওয়ার বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১১ জুন ‘বিয়ারিং দ্য আনবিয়ারেবল’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে এই মামলায় শিশু আদালতের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের ৫ আইনজীবী আবেদন করেন।

ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক নয়ন কুমারকে হাজির হয়ে এ ঘটনার লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেন। অপরদিকে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক মো. মনসুর আলীকে মামলার নথি (সিডি) নিয়ে হাজির থাকতে বলেন। সে অনুসারে ২২ আগস্ট তারা হাজির হন।

ওইদিন সাবেক ও বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা হাজিরের পর আদালত বলেছেন, এটা তো মারাত্মক একটা অভিযোগ। নেগলিজেন্স (অবহেলা) হয় কখন, সেটা মনের অজান্তে হয়। এটা তো অবহেলা না।

এ ঘটনায় সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা নিঃর্শত ক্ষমা চেয়ে তলব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। তবে আদালত এতে সন্তুষ্ট না হয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৬ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছিলেন। ওই দিন সাবেক তদন্ত কর্মকর্তাকে ফের হাজির হতে বলেছেন।

সোমবার ফের হাজির হন নয়ন কুমার। আদালতে নয়ন কুমারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ বলেন, নয়ন কুমার নতুন করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। শিশির মনির নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর কয়েকটি ধারা তুলে ধরেন। এছাড়া স্বীকারোক্তি আদায়ের পরে ওই শিশুর মেডিক্যাল সার্টিফিকেট তুলে ধরেন।

এরপর আদালত বিস্তারিত আইন দেখে আসতে সব পক্ষকে নির্দেশ দিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন রেখেছেন। একইসঙ্গে হাইকোর্টে চলা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নয়ন কুমারকে সব ধরনের তদন্ত কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার আদেশ দেন। এছাড়া মেডিক্যাল পাঠাতে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এছাড়া নয়ন কুমারকে হাজির থাকতে বলেছেন।

ওই হত্যা মামলায় নয়ন কুমার নিহত শিশুর ১২ বছর বয়সী বড় ভাইকে অভিযুক্ত করেছেন। আর মনসুর আলী ওই শিশুকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন দুই আসামিকে অভিযু্ক্ত করেছেন।  

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট ৮ বছরের শিশুর মরদেহ উদ্ধারের একদিন পর সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন তার বাবা মহিদুল। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হঠাৎ করেই স্থানীয় থানার একদল পুলিশ তার বাড়িতে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে ১২ বছরের বড় ছেলেকে নিয়ে যায় তারা।

‘আমরা পুলিশের সঙ্গে থানায় যাই। কিন্তু মামলাটির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আমাকে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেননি’, অভিযোগ করেন মহিদুল।

তিনি বলেন, ‘ছেলেকে দেখতে না পেলেও আমরা তার চিৎকার শুনতে পাই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আমাদের বাড়ি চলে যেতে বলে এবং পরদিন আদালতে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বলে। ’

পরদিন ৩০ নভেম্বর পুলিশ বড় ছেলেকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। সেখানেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। বাবা-মা ছোট ভাইকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসায় তাকে খুন করেছে বলে জানায় বড় ছেলে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন এবং পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেন। কিন্তু সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিটি শুনানিতেই উপস্থিত থাকতে হয়েছে ওই শিশুকে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১২ বছর বয়সী শিশুটিকে শুধু ভাই হত্যা মামলায় গ্রেফতারই দেখানো হয়নি, তার কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ দিনমজুর মহিদুলের।

তিনি বলেন, ‘খুনীরা প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে। আমার ছোট ছেলেকে খুনের স্বীকারোক্তি দিতে বড় ছেলেকে  বাধ্য করা হয়েছে। ’

বড় ছেলের জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকেই একমাত্র অভিযুক্ত দেখিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু, মহিদুল এতে নারাজি দিলে, ২০১৭ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।

পিবিআইয়ের চার বছরের তদন্তে বড় ছেলে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। পিবিআই খুনের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তারও করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১
ইএস/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।