ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ফোনে আড়িপাতা ও মিডিয়ায় প্রকাশ করা ঠিক নয়: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
ফোনে আড়িপাতা ও মিডিয়ায় প্রকাশ করা ঠিক নয়: হাইকোর্ট

ঢাকা: ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আড়িপাতা যেমন ঠিক না, তেমনি মিডিয়া সগৌরবে যেভাবে প্রচার করে এটাও কিন্তু ঠিক না।

ফোনালাপে আড়িপাতা প্রতিরোধের নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্ত করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

 

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চে শুনানি শেষে আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন।  

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং বিটিআরসির পক্ষে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।  

গত ১০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।

শুনানিতে শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, এ রিট আবেদন করার আগে বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ কারণে রিট আবেদন করা হয়েছে। বিটিআরসির আইনে ফোনালাপ ফাঁস হবার পর দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে প্রতিকার পাবার সুযোগ আছে সত্য।  

তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে যেকোনো নাগরিকের ফোনালাপ রেকর্ড করার সুযোগ আছে। এটা নিয়ে আমাদের কোনো কথা নেই। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় ফোনালাপ রেকর্ড করুক তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু যেকোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড ও ফাঁস করার আইনগত অধিকার কারো নেই। আমাদের বক্তব্য এখানেই। সংবিধান অনুযায়ী ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায় বিটিআরসিকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিটিআরসি আইনের ৩০(চ) ধারা অনুযায়ী ফোনালাপ ফাঁস হবার আগেই বিটিআরসি ব্যবস্থা নিতে পারে। কারণ মোবাইল অপারেটর কম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ করার আইনগত ব্যবস্থা বিটিআরসির আছে। সেই ব্যবস্থায় ফোনালাপ ফাঁসও বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বিটিআরসি। এ কারণে ফোনালাপ ফাঁস বন্ধে রুল জারির আবেদন করছি। একইসঙ্গে এরইমধ্যে যেসব ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, সেসব ঘটনা সঙ্গে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে বিটিআরসি যেন তদন্ত করে সেই নির্দেশনা চাচ্ছি।  

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যারা রিট আবেদন করেছেন, তারা আইনজীবী। তারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এ কারণে তাদের এ রিট আবেদন করার আইনগত এখতিয়ার নেই।  

তিনি বলেন, কারো ফোনালাপ ফাঁস হলে তিনি বিটিআরসি আইন অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় আইনেই মামলা করতে পারেন। ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সুযোগ আছে। প্রতিকার পাওয়ার সুনির্দিষ্ট আইন থাকায় জনস্বার্থে রিট আবেদন করার সুযোগ নেই।  

খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, আইনে যদি সুযোগ না থাকতো তবেই সংবিধান অনুযায়ী এ রিট আবেদন করার সুযোগ থাকতো। যেহেতু আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান আছে, তাই রিট আবেদন করার সুযোগ নেই।  

তিনি বলেন, কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হন তবে তিনি বিটিআরসির কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারেন। এখানে রিট আবেদনকারী কেউই সেটা করেনি। তাই রিট আবেদন চলতে পারে না। এ সময় তিনি ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে বিভিন্ন কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে বিটিআরসির সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।  

এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আড়িপাতা যেমন ঠিক না, তেমনি মিডিয়া সগৌরবে যেভাবে প্রচার করে এটাও কিন্তু ঠিক না। এজন্য সাংবাদিক, বিটিআরসিসহ সবারই সজাগ থাকা দরকার।  

আদালত আরও বলেন, এ ফোনালাপের কথোপকথন মিডিয়ায় প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু এ ফোনালাপ কারা রেকর্ড করে? দু’পক্ষের মধ্যে যেকোনো এক পক্ষ করে থাকতে পারে, তৃতীয়পক্ষও করতে পারে। তৃতীয় পক্ষের কী লাভ, আমার মনে হয় বিটিআরসিকে এটা দেখা দরকার।  

আদালত বলেন, কেউ যদি ফোনে আড়ি পাতে, কেউ যদি রেকর্ড করে এটা চিহ্নিত করার বিষয় আছে। তৃতীয় পক্ষ যদি কেউ রেকর্ড করে বিভিন্ন মিডিয়ায় দেয়, আর মিডিয়া যদি সেটা প্রচার করে, এক্ষেত্রে কিন্তু মিডিয়ারও একটা ভূমিকা আছে।

সম্প্রতি একটি প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে আদালত বলেন, সেখানে সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, কিছু কিছু রিপোর্টগুলো এত বেশি হাইলাইট করে প্রচার করা হয় কেন। উনাদের (সাংবাদিকদের) কাছ থেকে যে বক্তব্যটা পেলাম সেটা হল, কিছু কিছু খবর প্রচার হওয়ার পর যখন তারা (গণমাধ্যম) এটা (প্রচারিত খবর) ফেসবুক বা ইউটিউবে দেয় তখন এটাতে লাইক পড়ে, শেয়ার হয়। এতে নাকি লাখ লাখ টাকা আয় হয়। এ বিষয়টা কিন্তু অনেক সময় এ ধরনের নিউজগুলো (অডিও-ভিডিও ফাঁসের) প্রচারের পেছনে কাজ করে। আজকাল নানা ধরনের টিভি হয়েছে, ঘরে ঘরে অনলাইন (আইপি) টিভি। এসবের লাইসেন্সও নেই। এ সমস্যাগুলো আছে। যখন এ ধরনের নিউজ মিডিয়ায় প্রচারিত হয়, এসব খবর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।