ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ময়মনসিংহের সেই শিশুর ক্ষতিপূরণ-কল্যাণ নিশ্চিতে রিট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
ময়মনসিংহের সেই শিশুর ক্ষতিপূরণ-কল্যাণ নিশ্চিতে রিট

ঢাকা: ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতে রিট করা হয়েছে।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন।

রিটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব , সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটকারীর আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানান, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি থেকে এ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি খিজির আহেমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো.জাকির হোসেনের অবকাশকালীন বেঞ্চে এ আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।

শিশুটির আত্মীয় স্বজনরা জানান, শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল ছয় বছরের শিশুকন্যা সানজিদা।  

পরিকল্পনামতো ত্রিশালের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসনোগ্রাম করে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ফিরছিলেন বাড়ির পথে। কিন্তু মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হঠাৎ বেপরোয়া একটি মালবাহী ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের।  

তবে দুর্ঘটনার সময় মায়ের পেটের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রাকের চাকা চলে গেলেও অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ট হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্মের সময় নবজাতকের ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা তাৎক্ষণিক ওই নবজাতককে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া হয় উন্নত চিকিৎসা।  

এদিকে আলোচিত নবজাতক বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবিব প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক মো. শাহজাহান।  

তিনি জানান, নবজাতককে সব ধরনের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়েছে। এখন সে সুস্থ এবং ভালো আছে। তবে তার হাতের ভেঙে যাওয়া হাড় প্লাস্টার করা হয়েছে। তা সারতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।  

একই ধরনের তথ্য জানিয়েছেন ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজড হাসপাতালের চিকিৎসক জান্নাতুল শিলা। তিনি বলেন, শিশুটির ডান হাতের হাড় ভেঙে গেছে, সেখানে প্লাস্টার করা হয়েছে।

এদিকে শনিবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক চিকিৎসাধীন ওই শিশুকে দেখতে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসাসহ সব ধরনের দায়িত্ব নিয়েছেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, শিশুটির চিকিৎসা খরচসহ ভবিষ্যতের জন্য তার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

নিহতের স্বজনরা আরও জানান, ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রত্না বেগমের আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে মা-বাবার সঙ্গে ছয় বছর বয়সী সানজিদা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজন হলো- দশ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত।  মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে এখন তারা নির্বাক, দিশেহারা স্বজনরাও।  

এ ঘটনায় শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে ত্রিশালের রায়মনি গ্রামসহ পুরো উপজেলার বাসিন্দারা।  

পরে উপজেলার রায়মনি গ্রামে নিজ বসত ঘরের পেছনে পাশাপাশি তিন কবরে দাফন করা হয় জাহাঙ্গীর আলম (৪০), স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
ইএস/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।