ঢাকা: নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের ফান্ড থেকে তার সহযোগী অন্য প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগের সঠিক সত্যতা যাচাই করতে পারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) আইনজীবীর ফি ও অন্যান্য খরচের হিসাব তুলে ধরার পর এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ শ্রম আইন লঙ্ঘন করে ‘কর্মচারীদের অংশগ্রহণ তহবিল’র টাকা ট্রেড ইউনিয়ন ও আইনজীবীর ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর অভিযোগও যাচাই করতে পারে।
আদালতে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী।
কোম্পানির মুনাফার অংশ ৫ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠনসহ লভ্যাংশ ২০০৬ সাল থেকে তা শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার কথা। কিন্তু সেই লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করায় শ্রম আদালত ও হাইকোর্টে মামলা করেন তারা।
এরপর আদালতের বাইরে সমঝোতার কথা আসে। তখন এ অর্থ পরিশোধের সময় আইনজীবীর ফি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ওঠার পর আদালত বিষয়টি অর্থ পরিশোধের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান।
সে ধারাবাহিকতায় গত ২ আগস্ট বিষয়টি আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আইনজীবী ইউসুফ আলী আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা আদায় বাবদ তিনি ১৬ কোটি টাকা ফি নিয়েছেন। এছাড়া ‘বিবিধ ব্যয়’ বাবদ আরও ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা কর্মচারীদের অংশগ্রহণ তহবিল থেকেই ব্যয় হয়েছে।
সেদিন আদালত এ আইনজীবীকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হলফনামা করে ফের প্রতিবেদন দিতে বলেন। নির্দেশ মতো আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে প্রতিবেদন দেন আইনজীবী ইউসুফ আলী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মচারীদের অংশগ্রহণ তহবিল বাবদ গ্রামীণ টেলিকম থেকে পাওয়া ৪৩৭ কোটি টাকা থেকে আইনজীবী ফি এবং বিবিধ ব্যয় বাবদ ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা কেটে নেওয়া হয়। সেখান থেকে গ্রামীণ টেলিকম ও কর্মচারীদের ২৪৩টি মামলা পরিচালনার জন্য ফি বাবদ ১৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়। বাকি ১০ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকার মধ্যে ৫০ লাখ করে এক কোটি টাকা দেওয়া হয় ইউনিয়নের দুই নেতাকে, যারা ঋণ করে মামলা পরিচালনায় ব্যয় করেছিলেন। বাকি টাকা ইউনিয়নের সদস্যদের ভবিষ্যত কল্যাণে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়। সেখান থেকে ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও একজন সহ-সভাপতি নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি করে মোট ৯ কোটি টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর করেন। ট্রেড ইউনিয়নের পদাধিকারীদের এ ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরু করেছে।
হলফনামা করে দাখিল করা প্রতিমবেদনে আরও বলা হয়, কোনোভাবেই এ অভিযোগ তোলা যাবে না যে, এই টাকা থেকে আদালতের কোনো কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করার জন্য বা আদালতের কোনো কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, যেহেতু গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিকদের পাওনা বেতন পরিশোধ করেনি এবং প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে পরিচালনা পর্ষদ বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে, তাই সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা দুদককে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া উচিত।
জবাবে গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, দুদক ইতিমধ্যেই গ্রামীণ টেলিকমকে তার সংস্থাপনের তারিখ থেকে এ পর্যন্ত লেনদেনের বিষয়ে যাবতীয় নথিপত্র দিতে বলেছে এবং সেটি প্রক্রিয়াধীন। এরপর আদালত অভিমত দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেন।
পরে আহসানুল করিম বলেন, আবেদন নিষ্পত্তি করে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যদি কোনো অর্থ পাচার হয়ে থাকে, দুর্নীতি হয়ে থাকে, ট্যাক্স ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে থাকে অথবা কোনো ধরনের বেআইনি কাজ হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করতে পারে।
মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, আদালত এসব অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫,২০২২
ইএস/এএটি