লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার দায়ে স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে স্বামীকে নির্যাতন করে হত্যার আরেকটি মামলায় অভিযুক্ত স্ত্রীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম পৃথক দু’টি মামলায় এ রায় দেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে স্ত্রী শিল্পী আক্তারকে পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করিয়ে হত্যা করেন স্বামী মো. হোসেন। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত হোসেনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন। হোসেন বর্তমানে পলাতক।
এদিকে একই আদালত রামগতির সবুজগ্রাম এলাকার মো. জসিম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী ফরিদা বেগমকে বেকসুর খালাস দেন। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের সুতারগোপ্তা এলাকার সফিক উল্যার ছেলে মো. হোসেন (৪৪) একই উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের মো. আবুল হাসেমের মেয়েকে হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। পরে হোসেন চট্টগ্রামে গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করে দেন। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ দেখা দেয়। এর জের ধরে ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে বিষ মেশানো পানি জোর করে শিল্পীর মুখে ঢেলে দেন হোসেন। এতে শিল্পী বমি করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিজেকে বাঁচাতে হোসেন তার স্ত্রীর অসুস্থতার নাটক সাজিয়ে একজন গ্রাম্য ডাক্তার এনে বাড়ি থেকে সটকে পড়েন। অবস্থা গুরুতর দেখে বাড়ির লোকজন শিল্পীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২৯ অক্টোবর শিল্পীর বাবা মো. আবুল হাশেম বাদী হয়ে হোসেনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে সদর থানার সেই সময়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. মোসলেহ উদ্দিন ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে হোসেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ঘটনার পর থেকে হোসেন পলাতক।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার সবুজগ্রামে ২০১৬ সালের ৬ জুন রাতে শ্বশুর শাহজাহান বকসির বাড়িতে খুন হন জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। ঘটনার পর জসিম আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রচার করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পুলিশ একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে।
জসিম একই উপজেলার চর আফজল গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি পেশায় একজন জেলে ছিলেন।
এ ঘটনায় জসিমের ছোট ভাই মো. অহিদুর রহমান রামগতি থানায় বাদী হয়ে প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জসিমকে কিল, ঘুষি ও লাথি দিয়ে বুকে ও পেটে মারাত্মক আঘাতের কারণে তার পাঁজরের নয়টি হাঁড় ভাঙা হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে অহিদুর রহমান তার ভাবি ফরিদা বেগমসহ অজ্ঞাত তিন-চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তার ভাবির স্বভাব চরিত্র ভালো নয় এবং আর্থিক অনটনের কারণে দাম্পত্য কলহের জেরে ফরিদা বেগম তার ভাইকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার দুই মাস পর ৭ আগস্ট ফরিদাকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এর পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। ২০১৭ সালের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামগতি থানার সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন ভিকটিম জসিমের স্ত্রী ফরিদা বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। শুনানি ও সাক্ষ্য প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় ফরিদাকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
এসআই