ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তেলের অভাবে বন্ধ দুই অ্যাম্বুলেন্স, দুর্ভোগে রোগীরা

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২
তেলের অভাবে বন্ধ দুই অ্যাম্বুলেন্স, দুর্ভোগে রোগীরা

ফরিদপুর: ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের দুইটি অ্যাম্বুলেন্স দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

হাসপাতালে এসে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া বা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যেতেও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে তেল বরাদ্দ না থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে।

১৯১৭ সালে ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলী মুজিব সড়কের পাশে স্থাপিত হয় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১২৫।

রোগীরা প্রথম অবস্থায় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা থেকেও রোগীরা আগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন হাসপাতালটিতে। এ হাসপাতালে যে সব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব তাদের এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত জটিল রোগীদের পাঠানো হয় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা বিমান দত্ত বলেন, আমার শ্বশুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নিতে চাইলে তাকে জানানো হয় তেল সংকটের কারণে হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রয়েছে। পরে তাকে দ্বিগুন টাকা দিয়ে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে যেতে হয়।

মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। সে সুস্থ্য হয়েছে, তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ২ হাজার টাকা খরচ করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি যেতে হচ্ছে। অথচ সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার বেশি লাগত না।

শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণের পশ্চিম পাশে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের কাছে চারটি গাড়ি রাখার গ্যারেজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গ্যারেজে বাকি দুই অ্যাম্বুলেন্স কলাপসিবল গেট টেনে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে।

অ্যাম্বুলেন্স দুটির চালক মোতাহার হোসেন (৫১) ও ইমরান হোসেন (৪২) অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় তাদের হাসপাতালে কোনো কাজ নেই। তবে তারা প্রতিদিনই হাজিরা দেন হাসপাতালে।

শহরের গোয়ালচামট এলাকার বাসিন্দা শফিকুর রহমান বলেন, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সময়মত রোগীকে হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছেনা। বাইরের অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হয়, এছাড়া এ সুযোগে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলোও ভাড়া বেশি আদায় করছে।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার গণেশ কুমার আগারওয়ালা বলেন, তেল বরাদ্দ না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে পেট্রল পাম্প থেকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের তেল নেওয়া হতো, সেই পেট্রোল পাম্পে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। ফলে গত ১ নভেম্বর থেকে রোগীদের সেবায় আমরা অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারছি না। এটি দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, তেল কম বরাদ্দ পাওয়ায় আমাদের পক্ষে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তেল বাবদ আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। অথচ বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭২ হাজার টাকা। বরাদ্দের টাকা বাড়বে ভেবে আমরা নির্ধারিত পেট্রোল পাম্পে বুঝিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকার তেল বাকিতে ব্যবহার করেছি। কিন্তু এখনো বরাদ্দ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রাখতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ সংকট সমাধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (অর্থ) দুই দফা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একবারসহ মোট তিনবার লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো সদুত্তর পাইনি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।