ঢাকা: করোনা মহামারির অভিঘাত ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক মন্দায় সরকারের কৃচ্ছ্র সাধন নীতিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ছয় মাসে সরকারি ব্যয় ৩৮২ কোটি ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রচলিত বিভিন্ন নীতি ও পদ্ধতির সময়োপযোগী আংশিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় সাশ্রয় নিয়ে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি একথা জানান।
আগামী ছয় মাসে আরও ৭২৬ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ১৪ টাকা সাশ্রয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র বলেন, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী সময় সারা বিশ্বে আর্থ সামাজিক যে অস্থিতিশীলতা উদ্ভব হয় বাংলাদেশেও তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে ২০২২ সালের জুন থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডে ব্যয়যোগ্য অর্থ সাশ্রয়ের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয় খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রচলিত বিভিন্ন নীতি ও পদ্ধতির সময়োপযোগী আংশিক পরিবর্তন করে এবং ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ২০২২ সালের ১০ জুন থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৮২ কোটি ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৩২ টাকা ৯১ পয়সা সরকারি ব্যয় সাশ্রয় করেছে।
আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় সর্বমোট প্রায় ৭২৬ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে (৯৭ কোটি টাকা ভর্তুকির সাশ্রয়সহ) বলেও জানান মন্ত্রী।
সরকারি ব্যয় সাশ্রয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিরাট সাফল্য উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন বলেন, যা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এ কার্যক্রম সফল করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের কর্মচারীদের পাশাপাশি খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করে সরকারি ব্যয় সাশ্রয় করেছি তা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের জন্যও দৃষ্টান্ত হবে এবং তারা আমাদের অনুসরণ করলে সরকারই লাভবান হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডে ব্যয়যোগ্য অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ২০২২ সালের জুন থেকে উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগগুলোর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো অতিরিক্ত কোনো রিসোর্স প্রয়োজন হয়নি; সেবাগ্রহীতারা সন্তুষ্ট আছেন; ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে; সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধি কমানো হয়নি।
সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, চারটি উদ্যোগ গ্রহণের কারণে এ সাশ্রয় হয়েছে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়ন: ম্যানুয়াল ডাটাবেজের পরিবর্তে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়ন করে পূর্বের উপকারভোগী তালিকা থেকে ডুপ্লিকেট, অন্যান্য সরকারি কর্মসূচি থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত এবং নীতিমালা অনুযায়ী অযোগ্য উপকারভোগীদের বাদ দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের বিতরণ খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে মোট ৩৫৭ কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার ৬৫০ টাকা রাজস্ব ব্যয় সাশ্রয় করা হয়েছে; যা সরকারের এক বিরাট অর্জন। সাশ্রয়কৃত অর্থে পরবর্তীতে নতুন উপকারভোগী অন্তর্ভুক্তির জন্য বাছাই কার্যক্রম চলছে। আশা করা যায় আগামী জুলাই থেকে আরও নতুন উপকারভোগীদের এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এছাড়া ৩৫৭ কোটি টাকার খাদ্যশস্য নতুন বাছাইকৃত উপকারভোগীদের মধ্যে একই কর্মসূচিতে দেওয়া হবে।
সরকারি গম এবং পেষাইকৃত গমের ফলিত আটার অনুপাত পুনর্নির্ধারণ: বেসরকারি ময়দা মিলে বরাদ্দকৃত সরকারি গম এবং পেষাইকৃত গমের ফলিত আটার অনুপাত ইতোপূর্বে ঢাকা মহানগরে ৭৫:২৫ (গম:আটা) এবং ঢাকা মহানগর ব্যতিত সারাদেশে ৭৭:২৩ (গম:আটা) নির্ধারিত ছিল। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গত অক্টোবর থেকে সারাদেশে গম এবং পেষাইকৃত গমের ফলিত আটার অনুপাত ৭৯:২১ পুনর্নির্ধারিত হয়। এর ফলে গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ৮ কোটি ৮ হাজার ৯৮২ টাকা সরকারি ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। এর ফলে আগামী জুন পর্যন্ত প্রায় ৩২ কোটি ৩৫ হাজার ৯৩১ টাকা সাশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারি আধুনিক ময়দা মিলে উৎপাদিত ভুসির বিক্রয়মূল্য বাড়ানো: সরকারি আধুনিক ময়দা মিলে গম পেষাইয়ের ফলে উৎপাদিত ভুসির বিক্রয়মূল্য গতবছরের জানুয়ারির থেকে জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কেজি প্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করায় জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় বেড়েছে এবং এতে বছরে প্রায় দুই কোটি আট লাখ আট হাজার টাকা রাজস্ব আয় বাড়বে।
ওএমএস খাতে আটার (গম) বিক্রয়মূল্য পুনর্নির্ধারণ: ওএমএস খাতে ইতোপূর্বে ব্যবসায়ী পর্যায়ে গমের এক্স-গুদাম মূল্য ১৪ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিকেজি খোলা আটার বিক্রয়মূল্য ১৮ টাকা নির্ধারিত ছিল। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে গমের এক্স-গুদাম মূল্য ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৯ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিকেজি খোলা আটার বিক্রয় মূল্য ২৪ টাকা পুর্ননির্ধারণ করা হয়। এর ফলে গত বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই মাসে মোট ১৬ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় বেড়েছে। এর ফলে বছরে প্রায় ১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় বাড়বে। তবে এটি সাশ্রয় নয়, ভর্তুকি ব্যয় কমানো। এ খাতে প্রাপ্ত রাজস্ব অর্থ আগামী অর্থবছরের একই কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস