ঢাকা: প্রভুত্ববাদ কখনো গণতন্ত্র সুসংহত করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ মিলনায়তনে আয়োজিত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও রাজাকার অপশক্তির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আবীর আহাদ বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুমহান নেতৃত্বে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিকামী জনগণের সহযোগিতা বহু শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। সেদিন আমাদের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছিল ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক ও কতিপয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেদিন হানাদার পাকিস্তানকে এদেশের স্বাধীনতা ঠেকাতে নৃশংসতা গণহত্যা ও অত্যাচারের বন্যা বইয়ে দিতে যাবতীয় মারণাস্ত্র সরবরাহ করেই ক্ষান্ত হয়নি, উপরন্তু তার জগৎবিখ্যাত পারমাণবিক শক্তিচালিত সপ্তম নৌ-বহর নিয়ে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়া ও ভারত সেটিকে ঠেকিয়ে দেয়। এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে ব্যর্থ হয়ে তারা সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্র অব্যাহত রাখে। সেই আক্রান্তের ধারাবাহিকতায় তারা খাদ্যরাজনীতি চালিয়ে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে। ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পশ্চাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
তিনি আরও বলেন, প্রভুত্ববাদ কখনোই গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারে না। আর সেটা যদি হয় অন্য দেশের প্রভুত্ব ফলানোর প্রয়াস, তবে সেটা উপনিবেশবাদিতা পর্যায়ে পড়ে। একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য তা ভীষণভাবে অগ্রহণযোগ্য। বস্তুত, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত নাক গলানোই অশান্তি সৃষ্টি করে। সারা পৃথিবীতে আজ যে সংকট দৃশ্যমান তার মূলেও অনেকখানি ভিনদেশের প্রভুত্ববাদীতা দায়ী। আমরা এই প্রভুত্বগিরিকে প্রচণ্ডভাবে নিন্দা জানাই।
আমরা এটাও মনে করি, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো অভদ্রতার শামিল। যার সমস্যা তিনিই সমাধান করবেন। আগবাড়িয়ে এসে অযাচিত ঝামেলা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে, কিছু কিছু দেশ অন্য দেশে গিয়ে নিজেদের মোড়লীপনা ফলানোর চেষ্টা করে, ফলে সেই দেশের যেমন বারোটা বাজে তেমনি আগ্রাসী দেশটাও সকলের নিন্দা এবং ঘৃণার পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বেহায়া কানকাটা রমজান মার্কা দেশগুলোর কোনো লজ্জা শরম নেই।
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান কিছুদিন ধরে কিছু দেশ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের নোংরা নাক গলানোর চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী রাজাকার চক্র, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতসহ কিছু জনবিচ্ছিন্ন কিংবা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হাঁটা রাজনৈতিক দল অতি উৎসাহী আগ্রাসী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তারা জানে না। এই খাল কেটে ডেকে আনা কুমির হয়তো একসময় অর্বাচীন আমন্ত্রণকারীদেরকেও গিলে খেতে পারে। এমন উদাহরণও আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। ইরাক, লিবিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান কাউকেই এ ভরসা প্রদানকারীদের শেষ রক্ষা করেনি। বরং উদ্ধার করে দুঃসময়ে ফেলে চলে গিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমরা অনেকেই নিকট অতীতের ধ্বংসাত্মক উদাহরণ থেকে কোনো শিক্ষা নিই নাই।
আমরা অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি আমেরিকা, যে দেশ আমাদের জন্মলগ্ন থেকেই শত্রুতা করে আসছিল, তারা পূর্বাপর আমাদের অনিষ্ট সাধনে ব্যাপৃত রয়েছে। এদেরকে উসকে দিচ্ছে আমাদেরই দেশের রাজাকার অপশক্তি, অগণতান্ত্রিকমনা এবং পতিত জামায়াতিরা।
বলাবাহুল্য, এদের কাছে লুটপাট করা বিস্তর অর্থ রয়েছে এবং সেই অর্থ দিয়েই তারা লবিস্ট নিয়োগ করছে, কোনো কোনো দেশের জনপ্রতিনিধিদের কিনে নিয়ে বিবৃতি দেওয়াচ্ছে। আবার দেশের অভ্যন্তরেও গোলযোগ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্র করার সুযোগ তাদের খুবই সীমিত। কারণ, তারা জনধিকৃত, প্রত্যাখ্যাত। তাই বাধ্য হয়ে তারা ভিনদেশি শক্তির আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের ওপর ভর করেই বিভিন্ন এজেন্ডা দিয়ে, লাফালাফি করছে। এর সুযোগ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের ওপর তাদের প্রভুত্ব চাপিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তথাকথিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে যাচ্ছে।
মূলত দক্ষিণ-পূর্বে এশিয়ার তথা প্রশান্ত মহাসাগর হবে ভারত-বঙ্গোপসাগর, বিশেষ করে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি গড়ার অভিলাষ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বহুকাল তার শ্যেনদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আসছে। লক্ষ্য, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে, শক্তিশালী চীন ও ভারতকে মোকাবিলা করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে। তার কন্যা শেখ হাসিনা মার্কিনীদের এ অভিলাষ গুড়িয়ে দিয়ে আসছেন। এখানেই তাদের গাত্রদাহ।
ফলে তথাকথিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে মায়াকান্না জুড়ে দিয়ে তারা এ দেশকে ধ্বংস করে দিতে নানান চক্রান্তের জাল ফেঁদে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের উদ্দেশ্য এদেশের রাজনীতির ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে। তাদেরই সঙ্গে গাঁটছড়ায় নেমেছে এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি রাজাকার অপশক্তি। কিন্তু সবই নিষ্ফল। কারণ, সমস্ত ক্ষমতার উৎস জনগণ, তারাই নির্ধারণ করবে দেশের ভবিষ্যৎ। স্মর্তব্য, এই জনগণই একাত্তরে সেই দুর্দান্ত দানবকে বধ করেছিল। আবার যদি প্রয়োজন হয় সেই বধকারী শক্তি, সেই অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা আর জনগণ আবার জেগে উঠবে, আবার দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত এবং বহিচক্রান্ত থেকে দেশকে মুক্ত করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩
এমকে/এমজে