ঢাকা: ব্যবসায়ীরা মাছের খাবারে খারাপ জিনিস মেশান। এ বিষয়ে অনেক জায়গায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে সাকার মাছ বিনাশে আরও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার (২৪ জুলাই) রমনায় মৎস্য অধিদপ্তরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মাছের খাবারের মান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক জায়গায় মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা করেছি, খামারিদের সচেতন করেছি। স্থানীয় পর্যায়ে ফিসারিজ কর্মকর্তারা হঠাৎ ভিজিট করছেন। যেখানে এ রকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে, সেখানেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। এক্ষেত্রে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন তাদের আরও তৎপর হওয়া দরকার।
সাকার মাছের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সাকার মাছ আমরা কেউ আমদানি করিনি। আমাদের দেশ নদীমাতৃক। নদীর সংযোগ কিন্তু সমুদ্র থেকে। এর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত মাছও চলে আসে। সাকার মাছের বৃদ্ধি খুব দ্রুত গতিতে হয়। এটাকে আমরা নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে একটি মেসেজ দিচ্ছি যে- এটি খাবারের জন্য,মানুষের জন্য, জলাশয়ের জন্য ক্ষতিকর। আমরা ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে এ মাছগুলো বিনাশ করা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের ওই সক্ষমতা নেই যে প্রতিটি নদীতে জাল দিয়ে অথবা মেশিন দিয়ে সাকার মাছকে পৃথক করে ফেলতে পারব। মানুষকে যত উৎসাহিত করতে পারব, মানুষ যত সচেতন হবে- এক্ষেত্রে আমরা তত সফল হব।
বাংলাদেশে যখন সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকে, তখন ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আমাদের সীমানায় প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সে বিষয়ে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ আছে। এই গ্রুপের কার্যক্রম চলমান। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই বৈঠকে বসব।
ইলিশ ছাড়া অন্য মাছ কতটুকু রপ্তানি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাছের পুষ্টি দেশের জনগণের পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য। এরপর যতটুকু বাড়তি থাকে তা রপ্তানি করতে চাই। এবিষয়ে সঠিক তথ্যের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে তাদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৬ জেলে পরিবারকে মোট ৭১ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিবছর ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালে উপকূলীয় জেলার নিবন্ধিত জেলেদের মাসিক ৪০ কেজি হারে ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হচ্ছে।
এছাড়া, উৎপাদন বাড়াতে ইলিশ আহরণকারী ৩০ হাজার জেলে পরিবারের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ১০ হাজার ইলিশ-জাল বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দরিদ্র জেলেদের সঞ্চয়ী করে তোলা ও আপদকালীন জীবিকা পরিচালনা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সহায়ক তহবিল গঠনের জন্য ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ‘ইলিশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন তহবিল’ গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া সাস্টেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় আইডি কার্ড প্রদানের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার মৎস্যজীবীর ডাটাবেইজ হালনাগাদ করা হয়েছে। উপকূলীয় মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ৫২ হাজার ৪৯৩ টি মৎস্যজীবী পরিবার সমন্বয়ে ৪৫০টি মৎস্যজীবী গ্রাম সংগঠিত করা হয়েছে। সমুদ্রগামী মৎস্য নৌযানগুলো যথাযথভাবে তদারকি, নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম ও এ টি এম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭, জুলাই ২৪, ২০২৩
জিসিজি/এমএইচএস