ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

জানাজা-জুমার নামাজে মোবাইল চুরির টার্গেট তাদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
জানাজা-জুমার নামাজে মোবাইল চুরির টার্গেট তাদের

ঢাকা: জানাজা ও জুমার নামাজে গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মোবাইল চুরি করা চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর চানখাঁর পুল, জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজা, জুরাইন বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কসহ আরও কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. বাহাউদ্দিন হোসেন মিজি ওরফে বাহার (৩৫), রমজান আলী (২৯), মো. হামিম আহমেদ ওরফে হামিম (৩৪), মো. আতিকুল ইসলাম (২৮), মো. পারভেজ হাসান (১৮), মো. মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ (৩২), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো. ফয়সাল আহমেদ রনি (৩৪) ও মো. মিল্লাত হোসেন (২৬)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে চোরাই মোবাইল কেনা-বেচা ও আইএমইআই পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত তিনটি ল্যাপটপ, একটি মনিটর, একটি রেডমি নোট-১২ প্রোসহ সাতটি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সামগ্রী ও আইএমইআই পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ১৬টি ডিভাইস জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ’র কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এটিইউ’র পুলিশ সুপার (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।  

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, ওয়াজ মাহফিল এবং মানুষের জানাজার নামাজসহ জনসমাগমস্থল থেকে মোবাইল ফোন চুরি করে। এরপর চোরাই মোবাইল সেটের আইএমইআই পরিবর্তন করে কেনা-বেচা করে আসছিল।

প্রথমে চক্রটির সদস্যরা অনলাইনের সাহায্যে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় কোনো জানাজা আছে কি না খুঁজতে থাকে। কোনো জানাজার সন্ধান পাওয়ার পর তারা খোঁজ নিতে থাকে সেখানে কেমন মানুষের সমাগম হতে পারে। চক্রটি এ কাজটির কোড নাম দেয় ‘বডিকাজ’।

‘বডিকাজ’ বলতে তারা বুঝায় লাশের কাজ, মানে জানাজার কাজ। জানাজা নির্ধারণ হওয়ার পর তারা সেখানে পায়জামা, পাঞ্জাবি ও টুপে পড়ে যায়। সেখানে তারা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। এ গ্রুপগুলোতে তিনজন করে সদস্য থাকে।  

তিনি বলেন, এ গ্রুপের সদস্যরা জানাজার ভিড়ের মধ্যে কৌশলে একজনের পকেটে থেকে মোবাইল চুরি করে গ্রুপের দ্বিতীয় সদস্যকে দেয়। দ্বিতীয় সদস্য মোবাইলটি আবার তৃতীয় আরেকজনকে দেয়। মোবাইল হাতে পাওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তি জানাজার স্থান ছেড়ে চলে যান। পকেট থেকে মোবাইলটি যে চুরি করে নিয়ে আসে তাকে বলা হয় মহাজন।

জানাজা ছাড়াও চক্রটির টার্গেটে থাকতো শুক্রবারের জুমার নামাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুক্রবারে যে-সব মসজিদে বেশি মানুষ জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন, সেসব মসজিদে চক্রটির সদস্যরা তিন জনের গ্রুপ করে অবস্থান নেয়। জুমার নামাজের কাতারে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে একই কায়দায় মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় চক্রটি।

মসজিদের এ চুরিকে তারা ‘মসজিদ কাম’ বলে থাকে। জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে চক্রটির সব থেকে বেশি গ্রুপ সক্রিয় থাকে বায়তুল মোকাররমে।  

মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার বাহার চোরাই মোবাইলগুলো মাসুদের কাছে পাঠিয়ে দিত। গ্রেপ্তার মাসুদের কাজ হচ্ছে চোরাই মোবাইলগুলো নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছে দেওয়া।

তদন্তে এমন তিনটি দোকানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দোকানগুলো হলো- জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজার এসআই টেলিকম, যার মালিক গ্রেপ্তার সাইফুল। জুরাইনের সেতু মার্কেটের ফয়সাল টেলিকম, যার মালিক গ্রেপ্তার ফয়সাল ও যমুনা ফিউচার পার্কের চতুর্থ তলার একটি দোকান, যার মালিক গ্রেপ্তার মিল্লাত।

এ দোকানগুলোতে মূলত টেকনিক্যাল কাজ ও মোবাইল বিক্রির কাজ চলছিল। প্রথমে মোবাইলগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করা হত। তারপর মোবাইলগুলোর প্যাটার্ন লক খোলা হত। সর্বশেষ মোবাইলগুলো ল্যাপটপের মাধ্যমে ফ্ল্যাশ দিয়ে বিক্রি করা হত।

গ্রেপ্তারদের নামে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।