ঢাকা, রবিবার, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ০২ মার্চ ২০২৫, ০১ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে পানির নিচে সিলেট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৩
১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে পানির নিচে সিলেট

সিলেট: ‘অপরিকল্পিত’ নগরায়নের খেসারত দিচ্ছেন সিলেট নগরের বাসিন্দারা। গত ৩০ ঘণ্টায় গড় ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে সড়ক, অলিগলি ডুবে গিয়ে ড্রেন উপচে বাসাবাড়িতে ওঠেছে পানি।

থরথর করে পানি বাড়তে থাকায় আসবাবপত্র রক্ষা করতে গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন নগরের বাসিন্দাদের অনেকে।

বিশেষ করে ভবনের নীচ তলায়, টিনশেড বাসায় ও কলোনীতে বসবাসকারীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয় বেশি।

এছাড়া নগরের বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটেও পানিওঠেছে। ভোক্তভোগীরা অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ি করছেন ভোক্তভোগীরা।

এমন পরিস্থিতিতে ভোগান্তি যখন নিত্যসঙ্গী, তখন আবহাওয়া অধিদপ্তর দিচ্ছে আরো অস্বস্থিরখবর। আরো ৩দিন এমন মুষলধারে বৃষ্টিসহ আগামি এক সপ্তাহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

নগরবাসীর অনেকে জানান, শুক্রবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ছিল জনজীবন। দিন শেষে সন্ধ্যার পরও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। রাত ১১টার পর বাড়ে বৃষ্টির মাত্রা। মধ্যরাত পেরিয়ে মুষলধারে বৃষ্টিশুরু হলে নগরের অধিকাংশ এলাকায় বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। আসবাবপত্র রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন ভোগান্তিতে পড়া নগরবাসী।

বিশেষ করে রাত ৩টা থেকে সকাল ৬টা এবং সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ডুবিয়ে দেয় সিলেটের রাস্তাঘাট। পানি উঠে বাসা-বাড়িতে। আসবাবপত্র ভিজে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। কয়েক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পানির নিচে চলে যায় সিলেট নগরের অধিকাংশ এলাকা। ড্রেন উপচে বাসাবাড়িতে পানি ওঠার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পানি ওঠে সেবা বিঘ্নিত হয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে হাঁটু পানি মাড়িয়ে লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নীচ তলায়ও পানি ওঠেছে। সেবা গ্রহিতারা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে দেখা যায়।

ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল রহমান ভুঁইয়া বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের পেছনের ছড়ার পানি উপচে হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে হাঁটু পানি পেরিয়ে চিকিৎসক কর্মকর্তা,কর্মচারীরা ডিউটিতে এসেছেন। এছাড়া হাসপাতাল অভ্যন্তরে পানি ঢুকেছে। এতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জেনারেটর রুমে পানি ওঠেছে। আর চিকিৎসা যন্ত্রাংশ যেগুলো বহনযোগ্য সেগুলো নিচতলা থেকে উপরে তোলা হয়েছে। পানি প্রবেশ করায় চিকিৎসা সেবা খানিকটা ব্যাহত হচ্ছে। এর স্থায়ী সমাধানে মেডিকেল কলেজের পেছনের ছড়া থেকে পানি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পানি প্রবেশ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। জেনারেটর উঁচুতে স্থাপন করতে হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরের অভিজাত এলাকাখ্যাত উপশহরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নগরের মিরের ময়দান, দরগা মহল্লা, কেওয়াপাড়া, কাজল শাহ, উপশহর, মেজরটিলা, শিবগঞ্জ, লামাপাড়া,  কালিঘাট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, লালাদিঘিরপাড়, মাছুদিঘির পাড়, সরষপুর, দাড়িয়াপাড়া, তালতলা, শেখঘাট, শাহী ঈদগাহ,খাসদবির, চৌখিদেখি, বাদামবাগিচা, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বাসাবাড়ি, দোকানপাটে পানি ওঠে। এতে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়।  

নগরীর বাগবাড়ি এলাকার সোহাগ মিয়া বলেন, ভারি বর্ষণে এলাকারবাসা-বাড়ি-দোকানপাটে পানি প্রবেশ করেছে। এতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

নগরের মিরের ময়দান অর্ণবআবাসিক এলাকার আজমল আলী বলেন, সিলেটে বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা। মুষলধারে বৃষ্টিতে রাত ৩টার দিকে ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ঘরের আসবাবপত্রসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

নগরের তালতলার বাসিন্দা সানাওর রহমান বলেন, রাত ৩টার দিকে ড্রেন উপচে ঘরে পানি ঢুকে যায়। এতে ঘরের আসবাবপত্রসহ নষ্ট হয়ে গেছে।

উপশহর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক এম জে এইচ জামিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে সিসিক কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ফলে বারবার নগরবাসীকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পানি ঢুকে পড়লে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন ভোগান্তিতে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমের বাসাতেও পানি ওঠে আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের ছড়া, নালা পরিষ্কার করা হলেও ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি কমবে না।

জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, আগে বৃষ্টির পানি মাটি ধারন করে নিতো। সিলেটে আরবানাইজেশনের কারণে এখন সেই পানি গড়িয়ে নামতে হয়। নগরের বেশিরভাগ পানি ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশন হয়। অল্প বৃষ্টিতে নগরের বাসা-বাড়িতে পানির ওঠার বিষয়টি নিয়ে আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছি। এখন নিচু এলাকার পানি নিষ্কাশন করতে হবে। আর সুরমার পানি যাতে না প্রবেশ করে, সেজন্য স্লুইস গেট স্থাপন করতে হবে।

বাংলাদেশসময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।