ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে ১৭ বছর ধরে লাশ কাটার সহযোগিতা করে যাচ্ছেন জসীম উদ্দীন (৪৫)। বছরের পর বছর ধরে মর্গে সেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে সরকারি ও দৈনিক মজুরিতে চাকরির আশায় কয়েকবার দরখাস্ত জমা দিলেও কোনো চাকরি জোটেনি তার কপালে।
শুক্রবার (২৯ জুন) রাতে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় জসীমের।
তিনি বলেন, ঢামেক হাসপাতালে তার আত্মীয়রা চাকরি করতেন। এ সুবাদে বর্তমানে হাসপাতালের নতুন ভবন যেখানে সেখানে আগে মেডিকেল কোয়ার্টার ছিল। সেই কোয়ার্টারে আত্মীয়দের বাসায় তিনি আসা-যাওয়া করতেন। এ সুবাদে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে ২০০৭ সালে লাশ কাটার সহযোগিতার কাজে যোগ দেন। সেই যে ১৭ বছর আগে শুরু করেছেন এখনও সেই কাজ চলমান আছে।
জসীম বলেন, ময়নাতদন্ত চিকিৎসকের নির্দেশক্রমে লাশ কাটার সহযোগিতা করে থাকি। ময়নাতদন্তের পরে অনেকে মর্গে লাশ গোসল করিয়ে থাকেন। হুজুরের সঙ্গে সেই গোসলের সহযোগিতা করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় পচা লাশ কেউ ধরতে চায় না। আমরাই সেই লাশের দাফন প্রক্রিয়ার জন্য পরিপূর্ণ কাজ করে দেই। তখন লাশের আত্মীয়-স্বজনরা খুশি হয়ে যে যা দেয় এটা নিয়েই সংসার চালিয়ে থাকি। তিন সন্তানের বাবা আমি। ছোট মেয়ে ছাড়া দুই মেয়ে পড়াশোনা করে। বড় মেয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। মেজো মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী ও ছোট মেয়ে এখনও ছোট। লালবাগ এলাকায় পরিবার নিয়ে একটি বাসায় ভাড়া থাকি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরে ৩টি সরকারি হাসপাতালে মর্গ আছে। আগে দুটি ছিল। তখন ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে লাশের সংখ্যা বেশি থাকতো। এখনও চাপ আছে তবে আগের মতো নয়। এছাড়া ১৭ বছর ধরে মর্গে ময়নাতদন্তের কাজের সহযোগিতার পাশাপাশি সরকারি চাকরি জন্য আবেদন করেছিলাম দুয়েকবার কিন্তু হয়নি। এরপর এলো দৈনিক মজুরিতে নিয়োগ। ঢামেক হাসপাতালেও আবেদন করেছি সেটাও হয়নি। এখন বয়স হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের চিন্তায় মশগুল থাকতে হয়। মেয়েদের বিয়ে দিতে হবে কোনো স্থায়ী ইনকাম নেই।
জসীম বলেন, ট্রেনের ধাক্কার পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনায় অনেক খণ্ড খণ্ড লাশ ময়নাতদন্ত শেষে সেগুলো লাশ কাটা সহযোগী হিসেবে পাটপাট করে গুছিয়ে সেলাই করে গোসলের পর স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি।
সর্বশেষ ময়নাতদন্তের সহযোগী জসীম সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। যেন সামনের দিনগুলো আরো ভালোভাবে কাটতে পারে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও হাসপাতালের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদার বলেন, সরকারের নির্দেশনায় আধুনিক মর্গ অনেকাংশেই এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ। আগে মাটিতে বসে লোকজন চিকিৎসকের নির্দেশে লাশ কাটতো, এখন সম্পূর্ণ মেশিনের ওপরে লাশ কাটার ব্যবস্থা আছে। আগে লাশ সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ ছিল কয়েকটা। এখন আধুনিক ফ্রিজসহ দ্বিগুণেরও বেশি লাশ রাখা যায়। সবকিছুরই অগ্রগতি হচ্ছে। তাছাড়া মেডিকেল মর্গে সরকারি লোক আছে একজন। দুয়েকজন সহযোগী হিসেবে কাজ করে। যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে তাদের চাকরি হওয়ার দরকার বলে মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, ৩০, ২০২৪
এজেডএস/আরবি