ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে তৎপরতা শুরু করেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা নতুন করে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিগত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে অনেক বিদেশি কূটনীতিক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করতে স্বস্তি পেতেন না। অনেক দেশের কূটনীতিক সে সময়েও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এড়িয়েও চলেছেন। তবে পরিস্থিতি এখন বদলেছে। তাই কূটনীতিকরাও এখন আর বসে নেই। তারা চাইছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক জোরদার করতে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইরান প্রভৃতি দেশের কূটনীতিকরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। কূটনীতিকরা বলেছেন, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরপরই গত ৮ আগস্ট ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভে সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
২১ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ওই বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও ছিলেন। বৈঠকের বিষয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে। এছাড়া বাংলাদেশে চীনের যে বিনিয়োগ, সেটা জনগণের উন্নয়নের জন্য, বাংলাদেশের উন্নয়নে সেটা আরও বৃদ্ধি পাবে।
চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর চীনের রাষ্ট্রদূতের বিএনপির চেয়ারপারসনের অফিসে আসাটা আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। আমরা মনে করি যে চীনের বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের যে কমিটমেন্ট, উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুতি এবং একই সঙ্গে তারা পরিষ্কার করে বলেছে যে তারা (চীন) আধিপত্য বিস্তারে বিশ্বাস করে না।
বিএনপির সঙ্গে চীনের পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
২৩ আগস্ট বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ। বৈঠকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার বিএনপি ও চেয়ারপারসনের জন্য মঙ্গল কামনা করেন। তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি পাকিস্তানের পূর্ণ সমর্থনও পুনর্ব্যক্ত করেন।
২৬ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। ৫ আগস্টের পর জাতিসংঘের সমন্বয়কারী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
৯ সেপ্টেম্বর বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়।
এদিকে ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। প্রায় ৭ বছর পর প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি কূটনীতিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই বৈঠক করেন।
বিএনপি, জাতীয় পার্টির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন কূটনীতিকরা। গত ২ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগসহ অনেকগুলো বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ভেতরে এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তার উন্নতি কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে নিয়েও কথা বলেছি।
এছাড়াও জামায়াতের নেতারা ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিমের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠক নিয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কূটনীতিক বাংলানিউজকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠক একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে চাই। সে লক্ষ্যেই এই বৈঠক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
টিআর/এসআইএস