ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শ্রমিকদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে ৮০০ মানুষ জীবন দিয়েছেন। তাদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকের সংখ্যা ২০০। তাই এটাকে শুধুমাত্র ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থান না বলে ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থান হিসেবে উল্লেখ্য করতে চাই। তাদের এই আত্মত্যাগকে আমরা কখনও ভুলবো না। একইসঙ্গে আমরা পূর্ববর্তী স্বৈরাচার সরকারের সব অমানবিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারের শাসন আমলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৫ লাখ কোটি টাকা। আর এই ১৫ বছরে দেশবাসীর ঘাড়ে চেপেছে ১৮ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের বোঝা। এই টাকা ফেরত আনাসহ দেশের মানুষকে বিদেশি ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে এখনই আলাপ-আলোচনা শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে মজুরি বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বাদ, নিয়োগে নারী-পুরুষ বৈষম্য, অন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। কোথাও কোথাও কারখানা ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমারা দেখেছি— বহিরাগতরা শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আমরা গার্মেন্টস শ্রমিক ভাই-বোনদের ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের দাবিগুলো হচ্ছে—
অবিলম্বে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের আট সদস্যসহ ১১ গার্মেন্টস শ্রমিক ও সব শ্রমিক হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণ; ফেডারেশনের নিহত ৮ সদস্যের পরিবার ও সব শ্রমিক পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; ফেডারেশনের আহত ৫০ সদস্যসহ সব আহত শ্রমিকের প্রয়োজনীয় এবং উচ্চতর চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা;
গত মজুরি আন্দোলনে ২০ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকের নামে দায়েরকৃত ৪৩টিসহ শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা; প্রত্যেক কারখানায় ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ; যেসব কারখানার শ্রমিকরা ইতোমধ্যে মিড-লেভেল ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তদন্ত সাপেক্ষ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; বে-আইনিভাবে শ্রমিকদের ব্ল্যাক লিস্ট (কালো তালিকা) করা বন্ধ ও আগের কালো তালিকা বাতিল করা;
গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বহিরাগতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; শ্রমিক সংগঠনগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সব বাধা দূর করতে হবে; কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে; ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং পরিচালনায় সব বাধা দূর করতে হবে; ৪২ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে; কোনো কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলে শ্রমিক প্রতিনিধিদেরসহ দ্রুত সামাধান করতে হবে; দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে ও আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালাকে সংস্কার করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
টিএ/এমজে