ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে ধনী দেশগুলোর সহায়তা চায় টিআইবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে ধনী দেশগুলোর সহায়তা চায় টিআইবি

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সিংহভাগ অর্থের প্রধান গন্তব্য এবং সুবিধাভোগী হলো ধনী ও তথাকথিত উন্নত দেশগুলো। সম্প্রতি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকের এসব দেশে সম্পদ অর্জনের খবর উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি এবং দায়িত্বের অংশ হিসেবে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ বাংলাদেশে ফেরাতে সহায়তার জন্য এসব দেশকে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠনো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ডের অর্থপাচারের স্বর্গে পরিণত হওয়া দেশগুলোর পাশাপাশি সম্প্রতি কয়েক দশকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, বিশেষ করে দুবাই এবং এমনকি অনেক ‘অফশোর’ দ্বীপ অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। অর্থপাচারের এসব গন্তব্যে অত্যন্ত দক্ষ আইন সংস্থা, ট্রাস্ট কোম্পানি, অফশোর বিশেষজ্ঞ, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, হিসাবরক্ষক, নিয়ন্ত্রক বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবা সংস্থার শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা অর্থ পাচারের জন্য গোপন চুক্তিগুলো সম্পন্ন করে থাকে। এ সিন্ডিকেটগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাচারকারীদের জন্য অর্থ পাচারকে সহজ করে তুলেছে। তারা অর্থপাচারকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিতের সঙ্গে সঙ্গে রিয়েল এস্টেট, ব্যাংকিং এবং বিলাসবহুল পণ্যে লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিমালায় ঘাটতির সুযোগ নিয়ে অর্থপাচার করা হয়। এমন অনেক দেশ রয়েছে যারা পাচারকৃত অর্থ ট্রাস্ট, রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ এমনকি বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব পর্যন্ত দিয়ে থাকে। যদি নীতি ঘাটতি না-ও থাকে, তাহলে আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাবে অর্থপাচারে সহায়তাকারীদের জন্য ‘স্বর্গ’ তৈরিতে সাহায্য করে এবং এ সুযোগ সৃষ্টির ফলে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টিআইবি মনে করে বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন অবৈধ সম্পদ তাদের নিজস্ব আইনি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে চিহ্নিত এবং ফ্রিজ করতে হবে। অবৈধ স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্থ ও সম্পদ আহরণকারী সিন্ডিকেট বিলুপ্তির জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চুরি যাওয়া সম্পদ ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ শুরু ও তা ত্বরান্বিত করা এবং পারস্পরিক আইনি ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মতো আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে অর্থ পাচারকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থা, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রয়োজনীয় পেশাদারত্ব এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা তৈরিতে অবদান রাখতে হবে। এ ধরনের অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের উপরোক্ত গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা এবং সমন্বয় করতে হবে।

অর্থপাচার প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের কাঁধে। তবে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ যেসব দেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং পাচার হওয়া অর্থ যাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে এমন দেশ বা অঞ্চলগুলোর দায়িত্বও কম নয় বলেও টিআইবি মনে করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
এসএমএকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।