ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পর্যটন দিবসে আড়ম্বর আয়োজন নেই কক্সবাজারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
পর্যটন দিবসে আড়ম্বর আয়োজন নেই কক্সবাজারে

কক্সবাজার: আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সকালে শোভাযাত্রা বের করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গত বছরও সপ্তাহব্যাপী বর্ণিল আয়োজনে দিনটি পালন করা হলেও এবার অনাড়ম্বরভাবে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস।

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত শুধু আমাদের নয়, বাংলাদেশের পর্যটন পিপাসুদের কাছে যেন স্বপ্নের শহর এ কক্সবাজার। সমুদ্রের গর্জন কার না ভালো লাগে। এই যে সমুদ্রের সাদা সারি সারি ঢেউয়ের মুগ্ধতা কারে আন্দোলিত করে না। এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া কঠিন।

বালুকা বেলায় লাল কাঁকড়ার দোঁড়ঝাঁপ, লোনাজলে সমুদ্র স্নানসহ কক্সবাজার ভ্রমণের নানা অনুষঙ্গ যেন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সারা জীবন মোহিত করবে।  

সমুদ্র সৈকত মেরিন ড্রাইভে গেলে চোখে পড়ে প্রকৃতির অপরূপ বিস্ময়। পাহাড়-সমুদ্রের মেলবন্ধন, পরতে পরতে যেন প্রকৃতির অপার মুগ্ধতা।  

এছাড়া পর্যটনকে সমৃদ্ধ করেছে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালীর আদিনাত মন্দির, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া দ্বীপ, হিমছড়ির ঝর্ণাসহ পর্যটনে নানা বৈচিত্র্যতা।

তবে অভিযোগ রয়েছে, পর্যটন স্পট হলেও এসব সুরক্ষায় কিংবা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টদের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। সরকার বিভিন্ন সময় নানামুখী পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত তা কিছুই হয়নি। উল্টো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী, লাবনী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানের বালুকাবেলা দখল হয়েছে অসাধুচক্রের হাতে। আর বালিয়াড়ি দখল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাইসেন্সও দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময় পর্যটকরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। আবার অনেক সময় ছিনতাইকারী ও টমটম চালকদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন অনেক পর্যটক। রয়েছে ভাতের হোটেল ও আবাসিক হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগও।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্ষার পানির তীব্র স্রোতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমি। তীরে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সে ঝুঁপড়ি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে বেশ কয়েকটি চক্র। এতে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। নির্মল হাওয়া থেকে কিটকট চেয়ার বা শুকনো বালিতে বসার কোনো জো নেই। বিচ বাইক, ঘোড়ার অবাধ বিচরণ, ভ্রাম্যমাণ হকারদের ডাকাডাকিতে চরম বিড়ম্বনায় থাকে দর্শনার্থীরা। জোয়ারের আঘাতে সৈকত পারের পাশাপাশি তলিয়ে গেছে বিপুল ঝাউগাছ। দরিয়ানগর, হিমছড়িতে কিছুটা সংস্কার হলেও অন্য কোথাও কোনো সংস্কার হয়নি। নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থাও। ফলে পর্যটক আকৃষ্ট করতে পারছে না কক্সবাজার।

তাদের মতে, দীর্ঘতম সৈকতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। এ শিল্পকে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনার কথা বলা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। অযত্ন-অবহেলায় জৌলুস হারাতে বসেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত তীর কক্সবাজার।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাকালীন থেকে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। শুধু ছাত্র আন্দোলন থেকে চলতি সময় পর্যন্ত হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এ শিল্পে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই অমানিশায় ঢেকে যাবে এ শিল্প।

আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সমন্বয়ক মো. কলিম উল্লাহ বলেন, এখন পর্যটন শিল্পের অন্যতম সমস্যা রোহিঙ্গা ও মাদক। আর যেভাবে পাহাড় ও পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে ভবিষ্যতে মরুভূমি হবে কক্সবাজার। কোনো পর্যটক মরুভূমি দেখতে কক্সবাজার আসবেন না। এসব অনিয়ম বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক ও ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মঈনুল হাসান পলাশ বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

পর্যটন কর্পোরেশন কক্সবাজারের দায়িত্বশীল ও হোটেল শৈবালের ব্যবস্থাপক রায়হান উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। আর পর্যটন বোর্ড পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি ভালো কিছু হবে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে বারবার দাবি জানানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে পর্যটক হেনস্তার ঘটনায়ও এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। এখনো হোম ওয়ার্ক করছি।  

তিনি আরও বলেন, পর্যটন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কউক, সড়ক ও জনপদ, কক্সবাজার পৌরসভা, পর্যটন করপোরেশনের শৈবাল-প্রবাল, বিমান বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করে ছয়টি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। নাগরিকদের নিয়ে একটি সুপারভিশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক কথায় কক্সবাজারকে ঘিরে আমাদের সামগ্রিক প্ল্যান রয়েছে। সবার সমন্বিত সহযোগিতায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
এসবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।