ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আত্মপ্রকাশ করল বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘সাধারণ আলেম সমাজ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
আত্মপ্রকাশ করল বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘সাধারণ আলেম সমাজ’

ঢাকা: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে আগামীর রাজনীতি কেমন হবে ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আলেম সমাজের ভূমিকা কেমন হবে সে বিষয়গুলো সমাজের মানুষের সামনে তুলে ধরতে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে ‘সাধারণ আলেম সমাজ’।

এ সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে আগামী এক বছরের জন্য ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে সাধারণ আলেম সমাজ আয়োজিত  ‘জনসাধারণের প্রত্যাশা আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সাধারণ আলোচনা সভা ও আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব বলা হয়।  

২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় রিদোয়ান হাসানকে। সদস্য সচিব করা হয় রকিব মোহাম্মদ। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আবদুল্লাহ আল মাসুদ, তানজীল আরেফিন আদনান, মুহিম মাহফুজ, আশরাফ মাহাদী, মনজুর হাসান যুবায়ের, আশরাফুল হক, মাসুম বিল্লাহ, আতিকুর রহমান, হারুনর রশীদ নোমানী। সদস্য পদ দেওয়া হয় ১০ জনকে।

আত্মপ্রকাশ বক্তব্য সংগঠনের আহবায়ক মাওলানা রিদোয়ান হাসান বলেন, আবু সাইদকে যখন গুলি করা হয় তারপর থেকে কোনো আলেম ওলামা ঘরে বসে থাকেনি। তখন আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা ও তাদের মধ্যে ঐক্যের কারণে সাধারণ আলেম সমাজ গঠিত হয়ে যায়। কওমি মাদরাসা সবসময়ই অবহেলিত ছিল, যেকারণে তাদের মধ্যে এত সহজে ঐক্য তৈরি হয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনে যখন সমন্বয়করা স্বৈরাচার সরকারের হাতে আটক ছিল তখন আলেম সমাজ রাজপথে স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যায়। যাত্রাবাড়ী কাজলা এলাকায় সাধারণ আলেম সমাজ সব থেকে বেশি প্রতিরোধ গড়ে তুলে। সমন্বয়করা যখন এক দফা ঘোষণা প্রত্যাহার করতে চেয়েছিল স্বৈরাচারের চাপে, তখন আলেম সমাজ এক দফা ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

আত্মপ্রকাশ বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় সব থেকে বেশি ভয়াবহ ছিল যাত্রাবাড়ী ও  শনিরআখড়া এলাকা। সেখানে ৫ আগস্ট বিজয়ের দিনেও বিকেল পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে বহু আলেম শহীদ হন। এ এলাকায় আলেম সমাজের অবস্থান ছিল সবচেয়ে থেকে শক্তিশালী। বিজয়ের পরে কেউ যাতে বিপ্লবের ফসলকে নষ্ট করতে না পারে সে জন্য আলেম সমাজ মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রাত জেগে পাহারা দেয়। আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আলেম সমাজ কি ভূমিকা রেখেছে তা জানাতেই আমাদের এ আত্মপ্রকাশ।  

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কবি ও লেখক মাওলানা মহিন মাহফুজ কিছু দাবি তুলে বলেন, স্বাধীনতা ৭১ সালে হলেও, মানুষের প্রত্যাশা ২৪ সালে এসেও পূরণ হয়নি। এ প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় জনগণ ২৪ এর দ্বিতীয় স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে আমরা সংবিধান, শিক্ষা ও নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তাবনা করছি।

তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সংখ্যা গরিষ্ঠতা বিবেচনা করে ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লেখ করতে হবে। ধর্ম পালনের স্বাধীনতাই ধর্মীয় সম্প্রীতি, যে যার ধর্ম পালন করবে। অন্য ধর্মের ওপর হামলা করে ধর্মীয় সম্প্রীতি আসে না। ধর্মীয় সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে।

অর্থনৈতিক সেক্টরে কি কি পরিবর্তন ও উন্নত করতে হবে তা জানিয়ে মাওলানা মহিন মাহফুজ বলেন, অর্থনৈতিক সেক্টরগুলোতে কিছু পরিবর্তন ও সংস্কার করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ শেয়ার বাজারে আলেমদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে শরিয়াহ সিস্টেম চালু করতে হবে।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্য, দেশবরেণ্য আলেম, শিক্ষক, লেখক-বুদ্ধিজীবী,  এক্টিভিস্ট, ইমাম-খতিব ও দেশের ধর্মপ্রাণ নাগরিক এ আলোচনা সভায় অংশ নেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ শাহাদ হোসেনের বাবা বাছির মিয়া ছেলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি প্রতিনিয়ত ছেলেকে মনে করি। তার কথা চিন্তা করলে আমার আর কিছু ভালো লাগে না। আমার ছেলের লাশ আনার পর যেভাবে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছিল তা আমি কখন ভুলব না। আমার ছেলে হত্যাকাণ্ডে যে পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতারা ও এমপিরা জড়িত ছিল তাদের সবার ফাঁসি দাবি করছি।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া মেহেদি হাসানের বাবা বলেন, আমি সামান্য ময়লার গাড়ি চালাই। আমি ভালো করে কথা বলতে পারি না। শুধু এ ড. ইউনূসের সরকার, বিএনপির তারেক রহমান, ও জামায়াতের ভাইদের কাছে আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
ইএসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।