ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের মাঠ দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের মাঠ দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন

১৭০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে সেখানে স্কুল এক্সটেনশন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর প্রতিবাদে স্কুলের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১০টায় স্কুল প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে।

 

এই কর্মসূচিতে স্কুলের ১৯৭১ সালের প্রাক্তন ব্যাচের শিক্ষার্থীরাসহ অন্যান্য সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানায়। এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, যিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী, তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ মাঠে ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করে একটি স্ট্যাটাস দেন।

তিনি লেখেন, "ময়মনসিংহ জিলা স্কুল আমাদের আবেগের জায়গা, এই মাঠেই আমরা বড় হয়েছি এবং ক্রিকেটের হাতেখড়ি নিয়েছি। আমি অনুরোধ করছি, এই আবেগঘন মাঠটিকে ভবন নির্মাণের জন্য দখল না করার। " 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঠে এক্সটেনশন ভবন নির্মাণের জন্য পরিমাপ কাজ শুরু করে এবং মাঠের বিভিন্ন জায়গায় খুঁটি পুঁতে রাখে। বিষয়টি জানাজানি হলে, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশের আয়োজন করে।  

প্রতিবাদে বক্তারা বলেন, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের খেলার মাঠটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। এ মাঠে ১৯১৮ সাল থেকে লীলাদেবী শিল্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যা বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো ফুটবল টুর্নামেন্ট। এই মাঠ থেকেই দেশ-বিদেশের অনেক খ্যাতিমান ফুটবলার ও ক্রিকেটারের খেলার হাতেখড়ি হয়েছে। ভবন নির্মাণের এই পরিকল্পনা শুধু ঐতিহাসিক একটি মাঠ ধ্বংস করবে না, বরং স্কুলের ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করবে।

ময়মনসিংহ জিলা স্কুল বাংলাদেশ ফুটবল ও ক্রিকেটের অনেক তারকা খেলোয়াড়ের জন্মস্থান। দেশের অন্যতম ক্রীড়া প্রতিভা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, এই স্কুলের নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। তবে গত কয়েক বছরে স্কুলের ক্রীড়া কার্যক্রম ও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, গত বছর নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য ছাত্ররা নিজেদের টাকায় জার্সি ও খেলার সরঞ্জাম কিনে খেলায় অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে।  

প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলে-ন ১৯৭১ ব্যাচের ছাত্র ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ১৯৮৪ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র এবং বিশিষ্ট ফুটবল কোচ মারুফুল হক ফেরদৌস, ক্লাবের মেম্বার ১৯৮৭ ব্যাচের শামিম আজাদ, ১৯৮৭ ব্যাচের এ.কে. এম মাহবুবুল আলম, ১৯৮৯ ব্যাচের মোজাম্মেল হক টুটু, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি ১৯৯১ ব্যাচের এমদাদ উল্লাহ রাজু, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভাপতি রোকনুজ্জামান সরকার, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি ১৯৯৫ ব্যাচের আরিফ চৌধুরী রাসেল, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের এডমিন সেক্রেটারি ১৯৯৫ ব্যাচের শরিফুজ্জামান সোহেল, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের এসিস্ট্যান্ট মিডিয়া পাবলিকেশন্স সেক্রেটারি ১৯৯৫ ব্যাচের আমিনুল হক রিপন, ক্লাবের সাম্প্রতিক মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী ২০০০ ব্যাচের সোহাগ আহমদ, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের জয়েন্ট অর্গানাইজিং সেক্রেটারি ২০০৩ ব্যাচের মো. আব্দুল্লাহ আল শোয়াইব, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ২০০৪ ব্যাচের তামিম রিজওয়ানসহ ২০২৪ সাল পর্যন্ত অন্যান্য ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রেখে কর্তৃপক্ষের উদেশে প্রতিবাদ জানান।  

প্রতিবাদ সমাবেশে ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৪৫ ব্যাচের ছাত্ররা অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন প্রতিবাদকারীরা, মাঠটিকে রক্ষার জন্য তাদের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।