বরিশাল: আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পাঁচতলা বিশিষ্ট মেডিসিন ভবনটিতে রোগীদের পুনর্বাসন করতে সময় লাগবে। অন্তত তিনদিন সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল।
আগুনের ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালের ভবন পরিদর্শন শেষে রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ সময় তার সঙ্গে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রেজাউল আলম রায়হান, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসারসহ হাসপাতালের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, সবার সহযোগিতায় ভবনে থাকা রোগী, তাদের স্বজন, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা নিরাপদে উদ্ধার হয়েছেন। পুরো ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর আমাদের কাছে নেই। বর্তমানে ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার কাজটি পরিচালনা করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সিনিয়র চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, আগুন লাগার উৎপত্তি স্থান ভবনটির নিচতলা। সেখানে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ স্টোরে থাকা ম্যাট্রেস, মশারি, চাঁদরসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানোর কাজের জন্য সেখানে এখনও পানি জমে আছে। ফলে সবকিছু সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পুরো ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিরূপণ করতে সময় লাগবে।
এছাড়া ভবনের বাকি চারটি ফ্লোরে শুধু ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। আশা করি দ্রুত সময়ে মধ্যে ভবনটিতে রোগীদের স্থানান্তর করার কার্যক্রম শুরু হবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল আরও বলেন, মেডিসিন ভবনটিতে রোগীদের পুনর্বাসন করতে সময় লাগবে। অন্তত তিনদিন সময় প্রয়োজন। এর মধ্যে ভবনের নিচতলা ছাড়া বাকি ফ্লোরগুলো রোগীদের সেবার জন্য চালু করা সম্ভব হবে। নিচতলায় স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে আরও সময় লাগবে।
রোববার সকাল ৯টার দিকে শেবাচিমের পাঁচতলা নতুন মেডিসিন ভবনের নিচতলার লেলিন স্টোর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। স্টোরটি পুরুষ মেডিসিন ইউনিটের পাশে। ধোঁয়া দেখে পুরো হাসপাতালে আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ধোঁয়া খুব বেশি হওয়ায় অভিযান শেষ করতে তিন ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হয়।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচতলা ভবনটিতে মেডিসিন বিভাগের পাঁচটি ওয়ার্ডের ১০টি ইউনিট ও ডেঙ্গু ওয়ার্ড রয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ৭০ জন ডেঙ্গু রোগীসহ ৫৪৩ জন রোগী ছিল ভবনটিতে। এছাড়া রোগীদের স্বজন, নার্স, চিকিৎসক, স্টাফরাও সেখানে ছিলেন।
এদিকে দুপুরে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার পাশাপাশি ভবনটি সচল করতে যা প্রয়োজন তাই করা হবে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা পরিচালক জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত হয়তো শর্ট সার্কিট থেকে হয়ে থাকতে পারে। তবে তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাবে না। পরিচালককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন অধ্যাপক, ভবন নির্মাণকারী সংস্থা গণপূর্তের কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি করার জন্য। যারা অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন ও ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ করবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যায়, সেই সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন।
শওকত আলী বলেন, এখন জরুরি স্বাস্থ্য সেবা চালাতে যে সমস্ত সামগ্রীর প্রয়োজন তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত আকারে চাইতে হবে। সেই সঙ্গে টাকা পয়সার প্রয়োজন হলেও তা চাইতে হবে। কারণ জরুরি ভিত্তিতে এটিকে ওভারকাম করতে হবে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, শের-ইবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাসহ মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এবং বাগেরহাটের রোগীদের একাংশের সেবা দিয়ে আসছে। এখানে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার ব্যাঘাত ঘটবে। আর সেটা যাতে না হয় সেই প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
এমএস/এমজে