মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের বড়লেখার উপজেলার নানান প্রকল্পের মাঝে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজ না করেই বরাদ্দের অর্থ সংশ্লিষ্টরা লুটপাট করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
প্রকল্পের কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাশীন দলের নেতা কাজ না করেই বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টিআর কর্মসূচির আওতায় সাবেক সংসদ-সদস্য ও সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন তালিমপুর ইউনিয়নের টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। ওই বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি (ইতোপূর্বে বাতিল ঘোষিত) ও উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি নাজমুল আবেদীন নিজে প্রকল্পের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাসকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প কমিটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে জমা দেন। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্নের শর্তে যুবলীগ নেতা নাজমুল আবেদীন প্রকল্পের প্রথম কিস্তির এক লাখ টাকা ২৫ মে উত্তোলন করেন। অথচ শহীদ মিনার নির্মাণে বিদ্যালয়ে একটি টাকাও দেননি।
প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস জানান, প্রকল্প কমিটিতে তিনি স্বাক্ষর দেননি, সরকারি বরাদ্দের বিষয়টিও জানেন না। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে বড়লেখা মোহাম্মদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার মাঠ ভরাটের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। অথচ এই মাদ্রাসায় ভরাটের মতো কোনো মাঠই নেই। সাবেক পরিবেশমন্ত্রীর ভাগ্নে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদ সভাপতি হয়ে পাঁচ সদস্যের একটি প্রকল্প কমিটি পিআইও অফিসে জমা দেন। কোনো কাজ ছাড়াই ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রকল্পের প্রথম কিস্তি এবং ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তি উত্তোলন করেন।
মাদ্রাসা সূত্র জানান, ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি এই মাদ্রাসার দায়িত্বে রয়েছেন। তার দায়িত্বকালীন অদ্যাবধি এই মাদ্রাসায় এমপি, মন্ত্রী কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যানের কোনো সরকারি বরাদ্দ তারা পাননি। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বড়লেখা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট ও বাউন্ডারি নির্মাণের জন্য মন্ত্রীর নির্বাচনী বরাদ্দ মিলে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা সোয়েব আহমদ নিজে সভাপতি, প্রধান শিক্ষক অধীর চন্দ্র বিশ্বাসকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প কমিটি পিআইও অফিসে জমা দেন। গত বছরের ৩ অক্টোবর প্রকল্পের অর্থের প্রথম কিস্তি, ১৫ অক্টোবর দ্বিতীয় কিস্তি, ২৯ অক্টোবর তৃতীয় কিস্তি এবং ১২ নভেম্বর চতুর্থ কিস্তি উত্তোলন করেন।
ওই প্রধান শিক্ষক আরো জানান, প্রকল্প কমিটির পেপারে স্বাক্ষর দিলেও মাঠ ভরাট ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কোনো অর্থ বিদ্যালয় পায়নি। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে (প্রথম পর্যায় সাধারণ) দাসেরবাজার কলেজের শহীদ মিনারের স্থানে মাটি ভরাটের জন্য টিআর প্রকল্পে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ মিলে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা সোয়েব আহমদ নিজে সভাপতি, বিষ্ণু চক্রবর্তীকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প কমিটি পিআইও অফিসে জমা দেন। গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রকল্পের প্রথম কিস্তি এবং ২৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ উত্তোলন করেন সোয়েব আহমদ।
৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সোয়েব আহমদ এবং যুবলীগ নেতা মো. নাজমুল আবেদীনকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কোনো প্রকল্পে সাবেক মন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যান সম্পৃক্ত থাকায় নানা কারণে ওই প্রকল্পের অর্থ ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২৪
বিবিবি/এমএম