সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে প্রধান করে ৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কমিটি ঘোষণা করেন আরেক সমম্বয়ক সারজিস আলম।
কমিটিতে সদস্যসচিব হিসেবে সমম্বয়ক আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক হিসেবে সমম্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এবং মুখপাত্র হিসেবে সমম্বয়ক উমামা ফাতেমা রয়েছেন।
এই কমিটি দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সংগঠিত করতে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সারজিস আলম।
তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ১৫৮ জন সমম্বয়কের অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমরা বাংলাদেশে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা জেলায় একটি কাঠামো দাঁড় করাতে পারিনি। কিন্তু আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের একটি কাঠামো প্রয়োজন।
রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে না এই প্লাটফর্ম
দীর্ঘদিন থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের গুঞ্জন থাকলেও এই কমিটি কোনো রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে না বলে জানিয়েছেন সমম্বয়ক আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর সে ব্যানার রাজনৈতিক সংগঠনের রূপ নিয়েছিল। কিন্তু এই ব্যানার কোনো রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে না। পূর্বের মতো সকল মতের মানুষের অংশগ্রহণে এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জাতীয় প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমরা ১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্লাটফর্ম করেছি। আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষ হওয়ার পর এই ব্যানারে আর কোনো কার্যক্রম হবে না। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলনে সীমাবদ্ধ ছিল না। এই ব্যানার ফ্যাসিবাদের পতন তরাম্বিত করে।
কাদের বলেন, তাই আমরা মনে করছি এই ব্যানারের কার্যক্রম এখনই স্থগিত শেষ হওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র সংস্কারের দায়-দায়িত্ব এই ব্যানারের উপর বর্তায়। এছাড়া ৫ আগস্টের পর একদল সমম্বয়ক পরিচয়ে অপকর্ম করছে। সেক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি করলে তাদেরকে আইনের আওতায় বা সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে।
এই কমিটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ জনের কমিটিও পুনর্গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন সমম্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। একইসঙ্গে দেশব্যাপী কমিটিতে জেঞ্জি ও তরুণরা স্থান পাবে বলেও জানান তিনি।
এই কমিটি কী কাজ করবে?
কমিটি ঘোষণার পর বক্তব্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমার প্রথম কাজ হবে যারা বাংলাদেশকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদ কাঠামোর বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছিল এবং এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে সংগঠিত করে বৈষোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্থান নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্যাসিবাদী শক্তি নানা ফর্মে উত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছে। মুজিববাদী শক্তি যে ফর্মে আসুক না কেন সেটিকে এই বাংলার মাটি থেকে স্থায়ী উৎপাটন করার জন্য কাজ করব। তৃতীয়ত, আমাদের এক দফার অঙ্গীকার ছিল ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রক্রিয়াকে ত্বরাম্বিত করার কাজ করব।
সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, বাংলাদেশে আনাচে-কানাচে, পাড়া-মহল্লায়, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের যারা ছিলেন তাদের সংগঠিত করার কাজ করব। সর্বদা গণঅভ্যুত্থানের নীতি ও আদর্শ সংরক্ষণ ও প্রচারের কাজে নিয়োজিত থাকার বিষয়ে সচেষ্ট করার কাজ করব। গণঅভ্যুত্থানের অন্তর্ভুক্তিমূলক আদর্শ, সংগঠনটির সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের চেষ্টা করব। এছাড়াও ফ্যসিবাদের যেসব সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপাদান বাংলাদেশে রয়েছে, তা চিহ্নিত করে বাংলাদেশের জনগণপন্থী আদর্শ ও নীতি প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।
মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, অভ্যুত্থানে নারীদের যে ভূমিকা ছিল, তা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তারা রাজপথে নামে, সরকারের পতন ঘটায়, এরপর আবার ঘরে ফিরে যায়। তবে এবার নারীরা সিদ্ধান্তগ্রহণকারী হিসবে অংশ নেবে। সে প্রতিনিধিত্ব করতেই আমি কমিটিতে রয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৪
এমএম