ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বরগুনায় পান চাষে অপার সম্ভাবনার হাতছানি

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
বরগুনায় পান চাষে অপার সম্ভাবনার হাতছানি

বরগুনা: চোখ জুড়ানো পানের বরজ বরগুনার প্রতিটি উপজেলার গ্রামে গ্রামে। উৎপাদন খরচ কম ও বহুবর্ষজীবী হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

জেলার বদরখালী, গৌরীচন্না, ফুলঝুড়ি, বালিয়াতলী, আমতলী, পাথরঘাটায় পানের বরজের সমারোহ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বরগুনায় বিভিন্ন এলাকায় এবার পান চাষ হয়েছে ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় ছোট বড় বরজের সংখ্যা চার হাজার ১১২টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৫০টি বরজ। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পানচাষিদের নিয়মিত দেখভাল আর পরামর্শ দেওয়ায় চাষিরা সাফল্যের মুখ দেখছে।

সদর উপজেলার ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নে কুমড়াখালী গ্রামের পানচাষি মো. রহিম ফরাজী বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েক বছর সংসারে চরম অভাব আর টানাপোড়েনের মধ্যে জীবনযাপন করেছি। গত ২০২০ সালের শেষের দিকে একই গ্রামের পানচাষি বেল্লাল খানের সঙ্গে গল্পের একপর্যায়ে তিনি আমাকে পান চাষে উৎসাহিত করেন।



তিনি জানান ১ম বছর আমি এক বিঘা উঁচু জমিতে পানের বরজ করি। বাঁশ, খুঁটি, পাটকাঠি, দড়ি, সুতা ইত্যাদি সংগ্রহ করার পর আমি কিছু টাকা ধার করে পানের বরজ শুরু করলাম। এক বছরের মাথায় খরচের টাকা উঠে প্রায় অতিরিক্ত ৩০-৪০ হাজার লাভের মুখ দেখলাম। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমার সংসারে এখন কোনো অভাব নেই। এখন বছরে ইনকাম কয়েক লাখ টাকা।

বদরখালী পানচাষিদের মধ্যে আরেকজন দিজেবর, তার প্রতিবছরে খরচ বাদে প্রতি বিঘা জমিতে পানের বরজ হতে দুই লাখ টাকা আয় হয়।

তিনি জানান, পানের বরজ প্রতি বিঘা জমিতে প্রথম বছর প্রায় ৫০-৬০ হাজার খরচ হয়। সেক্ষেত্রে পান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই লাখ টাকা আয় হয়। পানের বরজ এর সুবিধা হচ্ছে প্রথম বছরে খরচ বেশি। তারপরে টানা ওই বরজ হতে ১০-১২ বছর আয় হয়।

পান চাষ করে সদর উপজেলার সহিদুল, আব্দুল খালেক, জব্বার ফরাজী, আলাম খান, কিশোর খয়রাতি, জগদীশ মাল, নরেন গাইন, কার্তিকসহ অনেকেই আলোর মুখ দেখেছেন। এখানকার পান স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশে-বিদেশে এ পান বিক্রি হচ্ছে। পানচাষিরা তাদের বরজ থেকেই পান বিক্রি করছেন পান ব্যবসায়ীদের কাছে। পদ্মা সেতুর সুফল এর কারণে এ অঞ্চলের চাষিরা আগের থেকে ভালো দাম পাচ্ছেন।

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পানচাষি শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পান চাষে বাম্পার ফলন হবে এ বছর। তবে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮৪ হেক্টর জমির পানের বরজ এখনও মাথা তুলে দাঁড়ায়নি। এতে পান উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে ৮০০ টন, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। এতে বরগুনার প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনও তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়নি। পানচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারের কোনো ধরনের প্রণোদনার আওতায় আনা হয় না বলেও জানান তিনি।

বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানের বরজ। উপজেলার প্রায় ইউনিয়নে রয়েছে উঁচু ও উর্বর জমি যা পান চাষে অত্যন্ত উপযোগী। আমাদের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা পান চাষের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে পান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। যদি সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয় তাহলে কৃষকরা আরও পান চাষ করে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।