ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘অস্ত্র’ হাতে মাদরাসার ভাইরাল ভিডিও, প্রকৃত ঘটনা যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
‘অস্ত্র’ হাতে মাদরাসার ভাইরাল ভিডিও, প্রকৃত ঘটনা যা

যশোর: যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি ভিডিও নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, সুসজ্জিত মঞ্চে হাঁটু গেড়ে বসা গুটিকয়েক মানুষ।

সবার পরনে সাদা পায়জামা, মাথায় টুপি। মঞ্চটির একটি কোণে সুসজ্জিত ডায়াস। ডায়াসের দু’পাশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর পোশাক সদৃশ্য পরিধান পরে দুই ব্যক্তি ‘অস্ত্র’ হাতে দাঁড়িয়ে। প্রায় একই ধরনের সাদা পোশাক পরিহিত আরেকজন ডায়াসে আরবি ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন। বক্তব্যের মাঝে মাঝে ‘আল্লাহ আকবর’ স্লোগান দিচ্ছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরাও।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের অনুকরণে দেওয়া ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের বক্তব্যের ভিডিওটি বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিকে ঘিরে নেট দুনিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটি যশোর সদর উপজেলার রামনগর রাজারহাট এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার। গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর মাদরাসাটিতে আঞ্জুমানের (প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের লড়াই-সংগ্রামের বিষয়টি অভিনয় করে দেখিয়েছেন।

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, অনেক সুনামের সঙ্গে মাদরাসাটি পরিচালিত হয়। মক্তব, হেফজ, কিতাব ও নাজিরা বিভাগসহ চারটি বিভাগের সাড়ে চারশ’ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। প্রতি বছরের মতো এবারও চলতি মাসের ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর মাদরাসাতে বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গজল, বাংলা, আরবি, হামদসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়। ওই অনুষ্ঠানে ইসরায়েলিরা যেভাবে ফিলিস্তিনি মুসলমানের ওপর নির্যাতন করছে, সেটা নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। কিতাব বিভাগের তিন শিক্ষার্থী নাটকটি মঞ্চায়ন করে। ওদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি নেতা সেজে আরবিতে বক্তব্য দেয়। পাশে কাঠ, প্লাস্টিক ও শোলা দিয়ে অস্ত্র বানায়। এটা শুধু মাত্র অভিনয়।

তিনি আরও বলেন, আঞ্জুমানে শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশ হয়। এতে যারা ভালো করে তাদের পুরস্কৃত করা হয়। বিষয়টি কোনো খারাপ উদ্দেশে নিয়ে করা হয়নি। তবে ভিডিওটি অনেকেই ভিন্ন উদ্দেশ্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলেই তেমন কিছু বিষয় না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরতলীর রাজারহাট বিহারি কলোনি এলাকায় ২০১২ সালে যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কওমি এই মাদরাসায় প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এখান থেকে মূলত হাফেজ, মাওলানা ও মুফতি ডিগ্রি দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকার একজন ইসলামি চিন্তাবিদ গণমাধ্যমকে বলেন, অনুষ্ঠানের ওই ভিডিওতে কোরআনের দুটি আয়াত বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কতল আরেকটি জিহাদ সংক্রান্ত। তবে সশস্ত্র গার্ডের মতো দাঁড়িয়ে এভাবে মাদরাসার অনুষ্ঠান করা ঠিক হয়নি। এতে মাদরাসা এবং আলেমদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি অভিনয়ের জন্য হলেও এভাবে করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভিডিওটি ফেসবুকে দেখেছি। মাদরাসার ছাত্রদের একটি প্রতিযোগিতার অংশ এটি। তারা ডামি অস্ত্র ব্যবহার করে অভিনয় করেছেন।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ভিডিওটি মাদরাসাটির বার্ষিক যেমন খুশি, তেমন সাজো অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে ককশিট দিয়ে তারা নকল অস্ত্র বানিয়ে উপস্থাপন করে। তারপরেও ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটি তদন্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
ইউজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।