ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চুরির দায়ে এলাকাছাড়া হন আকাশ মণ্ডল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
চুরির দায়ে এলাকাছাড়া হন আকাশ মণ্ডল

বাগেরহাট: বাবার মৃত্যু, মায়ের অন্যত্র চলে যাওয়া ও নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েছিলেন আকাশ মণ্ডল। পরে নানা সন্তোষ বিশ্বাসের বাড়িতে নিজের অন্য দুই ভাইবোনের বেড়ে উঠতে থাকেন তিনি।

একটা সময় নানা-নানির মৃত্যু হয়। আশ্রয়ের সম্বল হয় নানার বাড়িটি। অভিভাবকহীন অবস্থায় ওই বাড়িতেই অভাব, অনাদর ও অবহেলায় দিন পার করতে থাকেন তারা। আকাশ জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধে। এক সময় চুরির দায়ে এলাকাছাড়া হন তিনি। এরপর বছর পার হলেও তিনি এলাকায় যাননি, ভাই-বোনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেননি।

খবর নিয়ে জানা যায়, স্বামী মারা যাওয়ার পর আকাশ মণ্ডলের মা অভাব-অনটন সহ্য করতে না পেরে তাদের দুই ভাইকে ফেলে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে মুসলিম যুবকের সঙ্গে বিয়ে করে চলে যান। এরপর তার একমাত্র আপন বড়ভাই বিধান মণ্ডলও মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে আবির হোসেন নাম নিয়ে সেও আলাদা থাকতে শুরু করে। নৌযানে কর্মরত অবস্থায় কলেমা পড়ে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন আকাশ মণ্ডল, নাম নেন ইরফান।

গত ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা মাঝেরচর খালের মুখে নোঙর করে রাখা সারবাহী জাহাজের সাত খুনের ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার হন আকাশ মণ্ডল। তিনিই এমন কাজ করেছেন, বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর এলাকার স্থানীয়রা বিশ্বাস করতে পারছেন না!

আকাশের বড় ভাই বিধান মণ্ডলসহ এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলঘর এলাকায় সরকারি শিশু পরিবারের অদূরে সরকারি খাস জমিতে নানা মৃত সন্তোষ বিশ্বাসের টিনের ঘরে বেড়ে উঠেছিলেন তারা। বছর দেড়েক আগে আকাশ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার নাম হয় মো. আবির হাসান। পাঁচ বছর আগে এলাকায় চুরি হয়। এর অভিযোগ ওঠে আকাশের ওপর। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে এলাকাছাড়া হন তিনি।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর বাগেরহাট সদর উপজেলায় বিয়ে করেন আকাশ। তার স্ত্রী জানান, এক বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। আকাশ একবারই বাড়ি এসেছিলেন। তারপর আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি।

বিধান মণ্ডল বলেন, এক বছর হলো আকাশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। ইসলাম গ্রহণ করায় একটু মন কষাকষি হয়েছিল আমার সঙ্গে। তারপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। এলাকা থেকে যাওয়ার পরই জাহাজে কাজ নেয়। তারপর একবারই বাড়ি এসেছে। তা–ও গত বছরের শীতের সময়। কীভাবে এত বড় ঘটনা ঘটাল জানি না। কোনোভাবে হিসেব মেলাতে পারি না।

ভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারেও জানেন না বিধান। তিনি বলেন, এলাকায় থাকতে তো বিয়ে করেনি। জাহাজে জাহাজে থাকতো এটাই জানতাম। আর আমাদের কারো সাথেই কোনো কথা হতো না। টিভিতে দেখে লোকে বলছে, প্রথমে তো বিশ্বাস করিনি। পরে দেখি আকাশকেই দেখায়। সে যদি ওই ঘটনা ঘটায় তবে তার শাস্তি হোক।

প্রতিবেশীরা বলছেন, ছোট থেকেই অভাব-সংকটে বেড়ে ওঠায় ছোট-খাটো চুরি করেছিল আকাশ। কিন্তু তিনি যে কাউকে হত্যা করবেন- এমনটা তারা ভাবতে পারছেন না। এক সাতজনকে হত্যা করে ফেলা- সেটা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।

একই এলাকার বাসিন্দা কাজী রাকিব। তিনি আকাশের সমবয়সী। রাকিব বলেন, এলাকায় খুবই ভালোভাবে চলাফেরা করত আকাশ। মাছ ধরত। দুয়েক জায়গায় চুরি করলেও, মানুষ খুন করতে পারে বলে কখনও মনে হয়নি। এলাকার বাইরে আকাশ কি করেছে, তা তিনি জানেন না।

আকাশের প্রতিবেশী জিয়াউল হক উল্কা বলেন, অভাব ও অভিভাবক না থাকায় এলাকায় কয়েকবার মাছ-শাক, হাস-মুরগি ও মোটর চুরি করেছে আকাশ। চার বছর আগে ফকিরহাটের ফলতিতা বাজার এলাকায় সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির একটা ছোট দোকান দিয়েছিলেন তারা দুই ভাই। তবে সেটি বেশি দিন টেকেনি। জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় আকাশ জড়িত হলে তার বিচার হওয়া উচিত।

গত মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বাকেরগঞ্জ এলাকা থেকে আকাশকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা। র‌্যাবের বক্তব্য, জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় আকাশ মণ্ডল ‘একমাত্র’ খুনি। নিয়মিত বেতন–ভাতা ও ছুটি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে জাহাজের মাস্টারকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেন। জাহাজের অন্য ব্যক্তিরা জীবিত থাকলে সহজে ধরা পড়ে যাবেন ভেবে বাকি সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন বেঁচে যায়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।