“A building is a symbol, as is the act of destroying it. Symbols are given power by people. Alone, a symbol is meaningless, but with enough people, blowing up a building can change the world.” — V for Vendetta (2005); Director: James McTeigue
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ক্রেন-এক্সকাভেটর-বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ধানমন্ডির ওই বাড়িটির সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ করে।
বিক্ষোভ কর্মসূচির এক পর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সন্ধ্যা থেকেই বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের পর রাত পৌনে ১১টার দিকে বাড়িটিতে আনা হয় ক্রেন। এরপর সেখানে আনা হয় একটি এক্সকাভেটর। মধ্যরাত থেকে শুরু হয় বাড়িটি ভাঙার কাজ। পরদিন বৃহস্পতিবারেও চলেছে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার কাজ।
নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণার প্রতিবাদেই ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বরের বাড়ি অভিমুখে ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেয়। সেই কর্মসূচিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় শেখ মুজিবের বাড়ি।
কেবল ৩২ নম্বরের বাড়ি নয়, ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা৷ খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী, রাজশাহী ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখ পরিবারের সদস্যদের বাসভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়৷ চট্টগ্রাম, যশোরসহ দেশের কয়েকটি জেলায় শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ম্যুরালও ভাঙা হয়েছে৷
৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, “গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি। বুধবার রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে যার দুটো অংশ আছে।
একটা অংশ হলো—জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদেরকে অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধমকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন। ”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে, সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ”
শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙার ঘটনা আওয়ামী লীগের ভুল পদক্ষেপের কারণেই ঘটেছে বলে মনে করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেছেন, “পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ভুল পদক্ষেপের কারণেই ওই ঘটনা ঘটেছে৷ তারা এখন পর্যন্ত গণহত্যার দায় স্বীকার করে ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি৷ তারা উলটো দম্ভোক্তি করছে৷ তারা যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, দেশের মানুষ তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি৷ তারই প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ সরকারের উচিত হবে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে গণহত্যার বিচার করা। ”
অন্যদিকে সরকারের ব্যর্থতার কারণেই মানুষ আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ। ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “সারা দেশে পতিত স্বৈরাচারের টর্চার সেল আছে৷ এখনো আওয়ামী লীগের লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ সরকারের ব্যর্থতার কারণেই মানুষ আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে৷ সরকার যদি দ্রুত তাদের বিচারের আওতায় আনত তাহলে এমন হতো না৷ সরকারের উচিত দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা৷ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর যেগুলো টর্চার সেল হিসাবে ব্যবহার হয়েছে, সেগুলো জাদুঘর বানানো যায়৷ আবার আহতদের সেখানে পুনর্বাসনও করা যায়৷ এটা করলে মানুষের ক্ষোভ কমবে। ”
একসময় ৩২ নম্বরের বাড়িটি স্বাধীনতা সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে (১৯৭২-১৯৭৫) শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালি শাসন এবং গত দেড় দশকে তার কন্যা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন ওই বাড়িকে জুলুমতন্ত্রের মূর্ত প্রতীকে রূপান্তর করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান হয়। ভারতে পালিয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা প্রাণে বাঁচলেও বাংলাদেশের মাটি থেকে সমূলে উৎখাত হয় আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার পতনের পরপরই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
দেড় দশকের হত্যা-গুম-খুন দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনমানুষের বিপরীতে দাঁড় করানো শেখ হাসিনার আরও একটি ভুল পদক্ষেপ আওয়ামী লীগের রাজনীতিকেই নিঃশেষ করে দিল। ৩২ নম্বরের বাড়ির সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতিও গুঁড়িয়ে গেল!
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৫
এমজেএফ