ঢাকা, শুক্রবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১, ২১ মার্চ ২০২৫, ২০ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

দুশ্চরিত্রের হিটু শেখ আগে থেকেই বেপরোয়া, একাধিকবার খেয়েছিলেন পিটুনি

সুব্রত চন্দ ও জয়ন্ত জোয়াদ্দার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৫
দুশ্চরিত্রের হিটু শেখ আগে থেকেই বেপরোয়া, একাধিকবার খেয়েছিলেন পিটুনি

মাগুরা থেকে: ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ আগে থেকেই ‘দুশ্চরিত্রের’ ছিলেন, এমন তথ্য মিলেছে তার প্রতিবেশী ও এলাকার লোকজনের কাছ থেকে। এমন স্বভাবের কারণে বেশ কয়েকবার পিটুনি খেয়েছিলেন, সালিসেও শাস্তি পেয়েছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে গিয়ে এমন তথ্য মেলে। যেটি ইঙ্গিত দেয়, স্বভাবের অসভ্যতা দূর করতে না পারায় ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেন হিটু। প্রতিবেশীরা বলছেন, হিটুর এমন স্বভাব আগে থেকে ঠিক করা গেলে হয়ত এমন পাশবিকতা দেখতে হতো না।

জানা গেছে, গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি-পুকুরে উঁকি দিয়ে বৌ-ঝি-মেয়েদের গোসল করা দেখতেন হিটু। নিজের বাড়ির সামনেও এমন অপকর্ম করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন। সে সময় তাকে নিয়ে গ্রাম্য সালিস হয়। ওই সালিসে হিটুকে জুতাপেটা করার সিদ্ধান্ত হয়। ভুক্তভোগী নারীই তাকে জুতাপেটা করেন।  

গত ছয় মাসে আগেও একই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েন হিটু শেখ। নিজেকে রক্ষায় পরে তিনি পালিয়ে যান। তিনদিন পর বাড়ি ফিরলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। সেবারও সালিসে তাকে জুতাপেটা করা হয়।

ভুক্তভোগীদের পরিবারের লোকজন বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা এও জানান, হিটুর এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে তার মেয়ে ভুক্তভোগীদের কাছে মাফ চেয়েছিলেন।

আরও জানা গেছে, ফরিদপুরে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন হিটু। সেখানে কাজের সময় নিজের ভাগনির ননদকে ঘরে নিয়ে এসেছিলেন। ওই তরুণীকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন। লোকজন তাকে গণপিটুনি দেয়। মারধরের পাশাপাশি তার মুখে বিষ ঢেলে দেয় বিক্ষুব্ধরা। হাসপাতালে কয়েকদিন ভর্তিও ছিলেন হিটু।

হিটুর অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে মা রোকেয়া বেগম বাড়ির পাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান। তিনি বলেন, যে সময় এমন ঘটনা ঘটিছে আমি হাসপাতালে ছিলাম। বেটার বউয়ের কাছ থেকে শুনিছি, ওই বাড়ির বউ গোসল করতিছিল। বেটা ছাগল আনতে গিয়ে পানির শব্দ শুনে হয়তো একটু দেহিসে। মায়েডা যা তা ব্যবহার করিসিলো। এরপর দুইদিন ও (হিটু) এদিক ওদিক ছেলো। বাড়ি আসার পর লোকজন তাকে ধইরে নিয়ে গেলে পরে ওই বউ তাকে জুতার বাড়ি দেছে।

ফরিদপুরের ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাগনির ননদকে বিয়ে করতে চাইছিল। ওরা মাইরে ফেলাতি চাইছিল। বিষও খাওয়াইছিল। ও (হিটু) ফরিদপুরে হাসপাতালে ছেলো। সে মেলা বছর আগের ঘটনা।

বিষয়গুলো সম্পর্কে পুলিশ অবগত ছিল কি না জানতে চাওয়া হয় মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আইয়ুব আলীর কাছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে কাগজে কলমে এমন কোনো রিপোর্ট নেই। তার চরিত্রের সমস্যা আছে, স্থানীয়ভাবে শুনেছি। আমরা লোকমুখে দুটি ঘটনা সম্পর্কে জেনেছি। ফরিদপুরের ঘটনাটি সম্পর্কে শুনিনি। এগুলো নিয়ে আমরা এখনো কোনো তদন্ত করিনি। আমরা আপাতত শিশুটির ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছি।

মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড অপস) মো. মিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হিটুর চারিত্রিক সমস্যা আগেও ছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু যেহেতু এসব নিয়ে কোনো আইনি ব্যবস্থা কেউ নেয়নি, তাই আমাদের কাছে কোনো ডকুমেন্টস নেই। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আগে এমন দুটি ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনায় গ্রাম্য সালিস বসিয়ে হিটুকে জুতার মালা পরিয়ে লোকজন ঘুরিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৫
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।