নারায়ণগঞ্জ: বিদায়ী বছরে নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে যার প্রতিটিই ছিল আলোচিত মৃত্যু। যার মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী সহ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও ১০ম সংসদের সদস্য।
দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভুগে বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ ঢাকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর গোলাম মোর্শেদ ফারুকী। তার লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। গোলাম মোর্শেদ ফারুকী ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষানুরাগী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বরেণ্য রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য। গোলাম মোর্শেদ ফারুকী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির তিনি সদস্য। ৭০ সালে তিনি চাঁদপুর মতলব থেকে গণপরিষদ সদস্য ও ৭৩ সালে একই আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বর্ষীয়ান এই নেতার মৃত্যুর মাত্র এক মাস পর ১১ ফেব্রুয়ারি সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে বিদায় নেন আরেক বর্ষীয়ান নেতা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মফিজুল ইসলাম মফিজ। তাকেও রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। মফিজুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পরিবারের অন্যতম সন্তান একেএম শামসুজ্জোহার সাথে রাজনীতি করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। নায়ক চরিত্রে তার অভিনীত ছবির নাম বিন্দু থেকে বিত্ত।
অপরদিকে বিশাল দেহের অধিকারী সাবেক সার্জেন্ট শফি ভারতের কলকাতা ওজন কমাতে গিয়ে রহস্যজনক মৃত্যু বরণ করেন। তবে চিকন হওয়ার কারণে শফির মৃত্যু হয়েছে এমনটা মানতে নারাজ তার কলকাতার চিকিৎসক মনোজ খান্না। ১২৫ কেজি ওজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাইফুদ্দিন মাহমুদ শফি কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার মনোজ খান্নার পরামর্শ নিচ্ছিলেন।
এ বছরে সব থেকে আলোচিত মৃত্যু ছিল নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যুটি। তার মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা নারায়ণগঞ্জ। তার মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অশ্রু সিক্ত নয়নে ১০ মিনিট নাসিম ওসমান ও ওসমান পরিবার সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। যা এর আগে কোন সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে হয়নি।
৩০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দিবাগত রাত ১টায় ভারতের রাজধানী দিল্লীর অদূরে দেরাদুন শহরের একটি ক্লিনিকে তিনি মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেরাদুনেই তিনি আত্মঘাতী প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। নাসিম ওসমান জাতীয় সংসদের ৪বারের নির্বাচিত এমপি। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগে তিনি স্ত্রী দুই মেয়ে, এক ছেলে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬২ বছর। ১৯৫৩ সালের ৩১ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
দেশের প্রবীণ ফটো সাংবাদিক জহিরুল হক (হাজী জহির) ১৫ জুন সকালে ভারতের নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জহিরুল হক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেসক্লাব, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। এ সংগঠনের সভাপতির পদে একাধিকবার ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন সাদা মনের মানুষ।
বাংলাদেশ সময় : ১৭১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪