ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক-বর্তমান ১৪ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের মধ্যে দলটির আমিরসহ ১০ জনের ফাঁসি, একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড ও একজনের ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়েছে।
বছর শেষে আরও এক নেতার মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে জামায়াতের সাবেক-বর্তমান নেতাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন ১০ জন। ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ছাড়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ৮ জন হচ্ছেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও এটিএম আজহারুল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী, পলাতক জামায়াত নেতা বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই ঘাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার।
এছাড়া বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন দিলেও তার সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ রায়টি ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কার্যকরও করা হয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দিলেও সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ এবং কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড আপিল বিভাগে বহাল রয়েছে।
এছাড়া জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তার মৃত্যুতে আপিলে থাকা মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
তবে এ পর্যন্ত মোট দণ্ডিত হয়েছেন ১৫ মামলায় ১৬ যুদ্ধাপরাধী। জামায়াতের নেতারা ছাড়াও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন বিএনপির দুই নেতা। তারা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী এবং ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সহ সভাপতি পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার।
তবে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামায়াতের সাবেক রোকন মোবারক হোসেন বিচার শুরুর কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় বহিষ্কৃত নেতা।
এছাড়া বিএনপির সাবেক নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল। তার মৃত্যুতেও এ মামলাটি আপিলে নিষ্পত্তি ঘটেছে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
যুদ্ধাপরাধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুস সুবহানের বিচার শেষ হওয়ায় গত ৪ ডিসেম্বর থেকে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৮ ধরনের ৯টি মানবতাবিরোধী অপরাধে সুবহানকে অভিযুক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল-১। পরে মামলাটি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এ বছরের সর্বশেষ রায়ে জামায়াতে ইসলামির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসিতে ঝুলিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
চার বছর ৯ মাসে ১৯৭১ সালে যুদ্ধপরাধের দায়ে জামায়াতের এসব নেতাদের বিচার শেষ হয়েছে। তাদের মধ্যে আপিলে দলটির তিন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর একজনের (কাদের মোল্লা) সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হয়েছে। একজন ভোগ করছেন আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ (সাঈদী)। আর একজনের (কামারুজ্জামান) ফাঁসির চূড়ান্ত রায় কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে পুরো জাতি। নতুন বছরের শুরুতেই অপেক্ষমান থাকা জামায়াতের বাকি একজনের (সুবহান) মামলার রায়ও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আর এসব সম্ভাবনা জিয়ে রেখে বিদায় নিতে যাচ্ছে ২০১৪ সাল, আসছে নতুন বছর ২০১৫।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪