টঙ্গী থেকে ফিরে: নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমা এলাকা। জল, স্থল এমনকি আকাশপথ ঘিরেও নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর একদিন আগেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের জন্যও থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা।
বৃহস্পতিবার (০৮ জানুয়ারি) নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন র্যাবের নতুন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। সরেজিমনে ইজতেমা এলাকা ঘুরে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মীদের দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে।
ঢাকা ময়মনসিংহ মূল সড়ক থেকে শুরু করে একেবারে ইজতেমা ময়দান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে রয়েছেন নিরাপত্তা সদস্যরা। র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের আলাদা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ইজতেমা আয়োজনের জন্য সবকিছুই প্রস্তুত করা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ঘুরে ঘুরে ইজমেতায় আগত লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের কোনো সমস্যা হলে তা সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন।
জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমানদের এ জমায়েত যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান, সব ধরনের হুমকি মাথায় রেখেই আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ব ইজতেমায় র্যাব কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। র্যাবের পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাক ও ছদ্মবেশে দায়িত্ব পালন করবে র্যাব। এছাড়া আকাশ পথে টহল দেবে র্যাবের হেলিকপ্টার।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ইজতেমা ঘিরে পুলিশ পাঁচস্তরের নিরাপত্তা নিয়েছে। ইজতেমার আগে, ইজতেমা চলার সময়, দুই ধাপের মাঝে ও ইজতেমা শেষে ১৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা পাঁচ সেক্টরে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করবে। ইজতেমা চলার সময় ময়দানের চতুর্দিকে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
র্যাব সদর দফতরের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক মেজর মাকসুদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব ইজতেমার বিশাল জনসমাগমে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধকল্পে অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেবে। ইজতেমা ময়দানকে ৪টি সেক্টরে ভাগ করে প্রায় ১ হাজার র্যাব সদস্য ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
তিনি বলেন, ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা করা হচ্ছে।
এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা ও নজরদারির সুবিধার জন্য সমগ্র ইজতেমা ময়দান ঘিরে থাকবে র্যাবের ৯টি অবজারভেশন পোস্ট। আউট প্যারামিটার, সেন্টার প্যারামিটার ও ইনার প্যরামিটার এলাকায় সন্দেহজনক সব হোটেল, রেস্ট হাউজ, গেস্ট হাউজ, বস্তি ও অন্য সন্দেহভাজন স্থানে তল্লাশি করা হচ্ছে।
মাকসুদুল আলম বলেন, ইজতেমা স্থলের অভ্যন্তরে ছদ্মবেশে ও বিশেষ পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিসহ গাড়ি এবং মোটরসাইকেলে ইজতেমা এলাকায় টহলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। স্থল ফোর্স ও নৌ টহলের পাশাপাশি র্যাবের একটি চৌকস দল হেলিকপ্টারযোগে ইজতেমা ময়দান ঘিরে পর্যায়ক্রমে টহল দেওয়ার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং স্থল ফোর্সের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধকল্পে নেওয়া হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
তিনি জানান, র্যাব সমগ্র ইজতেমা স্থলের নিরাপত্তার বিষয়টি একটি প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, দু’টি সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও পর্যাপ্ত সিসিটিভি’র মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করবে। র্যাবের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে ইজতেমার পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিদেশি অতিথিদের জন্য থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য র্যাব স্কোয়াড এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে অবৈধ পথে প্রবেশ বন্ধ ও সব প্রবেশ পথে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি, ইউনিফর্ম টহল, সন্দেহভাজন সব স্থান, ব্যক্তিদের ব্যাগ এবং প্রয়োজনে বিছানাপত্র তল্লাশির মাধ্যমে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হবে বলে জানান মাকসুদুল আলম।
০৯ জানুয়ারি, শুক্রবার থেকে প্রথম ধাপে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৪