ঢাকা: মিডিয়ায় বক্তব্য সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশে নতুন হলেও বিশ্বে নতুন নয়।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের লিখিত অনুলিপিতেও যুক্তরাজ্যের একটি ঘটনার রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ১৯৮৮ সালে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮৮ সালের ১৯ অক্টোবর যুক্তরাজ্য সরকার এক নির্বাহী আদেশে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ১১টি দলের বক্তব্য রেডিও, টিভিতে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ নিষেধাজ্ঞা ১৯৮৮ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকে। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব ডগলাস হার্ড বিবিসি লাইসেন্স অ্যান্ড এগ্রিমেন্ট এর ১৩ (৪) ধারা এবং ১৯৮১ সালের সম্প্রচার আইনের ২৯ (৩) ধারায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই সময় যুক্তরাজ্যে একটি বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই ১১টি দলের নেতারা গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন বলে সরকার মনে করে। এ কারণে সে সময়কার সরকার তাদের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
পরে একদল সাংবাদিক যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের ওই ঘোষণা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন। আদালত বিষয়টি শুনানি করে সরকারের ওই ঘোষণাকে বৈধ বলে রায় দেন। পরে বাদী আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে রায় দিয়েছেন বলে তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদেশের কপি বাংলানিউজের হাতে আছে।
বুধবার (৭ জানুয়ারি) বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তারেকের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ বন্ধে কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তথ্য সচিবের প্রতি রুল জারি করেন আদালত।
হাইকোর্ট তার আদেশে এ রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারেকের কোনো বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
একইসঙ্গে তারেক রহমানের বর্তমান অবস্থান এবং তার পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট এস এম মুনীর, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম এমপি প্রমুখ।
শুনানিতে শ ম রেজাউল করিম বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্য সংবিধানের ৭ ক ও ৩৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। সবোর্চ্চ আদালত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে রায় দিয়েছেন। অথচ তারেক রহমান তাকে ‘পাকবন্ধু’ বলছেন, যা আদালতের অবমাননা।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।
ভবিষ্যতে কোনো পত্রিকা, ইলেট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, পুন:উৎপাদন না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তথ্য সচিবের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয় রিট আবেদনে।
রিটে বলা হয়, তারেক একজন ফেরারি আসামি। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে ও বেআইনিভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন। একজন ফেরারি আসামির বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার হতে পারে না। যাকে আদালত খুঁজে পাচ্ছেন না, তার বক্তব্য প্রচারযোগ্য নয়।
রিটে বলা হয়, ফেরারি তারেক রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নানা অপরাধমূলক কথা বলছেন। যা দণ্ডবিধি অনুসারেও অপরাধ। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছেন।
তার এসব বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি শান্তিভঙ্গ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৫
** এবার বিচারপতি সাইফুর রহমানের বাড়িতে ককটেল হামলা
** বিচারপতির রেজাউলের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আটক ১
** বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের ফেনীর বাড়িতে আগুন
** তারেকের বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট