ঢাকা: সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগে অর্থ আত্মসাতের বিশেষ কৌশল আটকে গেছে অডিটে। ইজারাদারদের কাছ থেকে সেতু, ফেরিঘাট ও ফেরির ইজারা মূল্যের কিস্তির ১১ কোটি ৬৮ লাখ এক হাজার ৮১ টাকা আদায় করেও অনাদায়ী দেখানো হয়েছে।
এ টাকা সরকারি কোষাগারে না দিয়ে নিজেদের পকেটভারী করার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ কম্পোট্রলার অ্যান্ড অডিট জেনারেলের কার্যালয় (সিএজি)।
অডিট প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ইজারাদারদের কাছ থেকে প্রাপ্য ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ১১০ টাকা ভ্যাট ও আয়কর আদায় হয়নি বলে দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কমিটিতে। অনাদায়ী টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করে অডিট অফিসের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে আপত্তি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ২০০৮-০৯ ও ২০০৭-০৮ অর্থবছরের হিসাব সম্পর্কিত প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
কমিটি এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারের টাকা ফেরত আনা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধ অতিদ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, আফছারুল আমীন, বেগম রেবেকা মমিন, শামসুল হক টুকু, মঈন উদ্দীন খান বাদল, রুস্তম আলী ফরাজী এবং বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশ নেন।
সিঅ্যান্ডএজি মাসুদ আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম.এ.এন. ছিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির সদস্য শামসুল হক টুকু বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, যেসব টাকা আদায় হয়নি বলে দেখানো হয়েছে, তা আদায় করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ সম্পাদনে ব্যর্থ ঠিকাদারদের কার্যাদেশ বাতিল করা হলেও আরোপিত জরিমানা বাবদ ৩ কোটি ৯ লাখ ৪১ হাজার ৭৩৬ টাকা আদায় না করা এবং চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ সম্পাদন না করা সত্ত্বেও পারফরম্যান্স সিকিউরিটি এবং নিরাপত্তা জামানত বাবদ ১ কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭০৪ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।
এমনকি দায়ী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থা (প্রা.) লিমিটেড ও এর মালিক কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি।
এমনকি কাদের সিদ্দিকী আদালতে আরবিট্রেশনের আবেদনের মাধ্যমে নিজের পক্ষে রায় নিয়ে নিলেও এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়নি।
কমিটি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আসা রায়ের বিরুদ্ধে পুনঃআপিল দায়ের করা, চলমান আরবিট্রেশন মামলার তদবির অব্যাহত রাখা, দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, পারফরম্যান্স সিকিউরিটি ও নিরাপত্তা জামানত বাবদ অর্থ নগদায়ন, যেসব কর্মকর্তা পারফরম্যান্স সিকিউরিটি ও নিরাপত্তা জামানত বাবদ অর্থ ফেরত প্রদান করেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে।
এদিকে, পরিকল্পনা কমিশন ও সওজ অধিদফতর অনুমোদিত পেভমেন্ট ডিজাইন উপেক্ষা করে সড়কের পার্শ্ব বর্ধিতকরণের নামে ঠিকাদারকে অর্থ পরিশোধ করায় ৪৮ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ড্রয়িং উপেক্ষা করে হার্ড সোল্ডারে সিল কোটের কাজ করে সরকারের ১ কোটি ৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ টাকা এবং ড্রইং ডিজাইনের পরিবর্তন না হওয়া সত্ত্বেও অনুমোদিত প্রাক্কলনে উল্লিখিত কাজের পরিমাণের চেয়ে বেশি পরিমাণ বিভিন্ন কাজের মেজারমেন্ট নিয়ে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করায় সরকারের ১ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ১৬৭ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া বিল পরিশোধকালে উৎসে আয়কর কর্তন না করায় সরকারি রাজস্ব বাবদ ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ টাকা এবং এলজিইডিতে স্থানান্তরিত রাস্তা সড়ক বিভাগের মেরামত বাবদ ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৯ টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। কমিটি অতিদ্রুত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৫