ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জমিই কাল! দখল নিতেই আগুন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫
জমিই কাল! দখল নিতেই আগুন ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ ঝাউচর। এখানে গড়ে উঠেছে ৫টি ছোট বড় দোকান, একটি গোড়াউন ও একটি বাড়ি।

লাইফ অ্যান্ড কেয়ার হাসপাতালের প্রবেশ পথে সরকারি খাস জমিতে গড়ে উঠেছে দোকান ও বস্তি।

বুধবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় এখানেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অথচ ৫টি দোকান বন্ধ হয়ে যায় রাত সাড়ে ১০টায়।

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সেলিমের গোডাইন। এখানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার প্লাস্টিক পণ্য ছিল বলেও দাবি করেন সেলিম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগুন লাগে নাই। আগুন ইচ্ছা করেই লাগানো হয়েছে। আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্যই আগুন লাগানো হয়েছে। জমিই কাল! দখল নিতে ইচ্ছা করেই আগুন দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে পুড়ে যাওয়া দোকানের মধ্য থেকে মালামাল খোঁজার চেষ্টা করছেন নাসিম। দোকানের ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। চা, বিস্ক‍ুট, কেক, পান ও সিগারেটসহ নানা পণ্য বিক্রি করে সংসার চলে তার।

নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, সাড়ে ১০টায় দোকান বন্ধ করি। খবর শুইনা আইয়া দেহি কিচ্চু নাই! সব পুইড়া শ্যাষ। আমাদের এহানো রাখার  দরকার নাই, কিন্তু পুড়াই ছাই করবে ক্যান।

দোকানে কে আগুন দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কে দিছে, ব্যাটাগো দেহি নাই।

শীতের রাতে সব থেকে যেন বড় ক্ষতি হয়ে গেছে স্বামী হারা গুলনাহারের। আজ থেকে ৬ মাস আগে স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যান। বড় মেয়ে আখি (১০), মেঝো ছেলে আপন (৬) ও ছোট মেয়ে পাখিকে (৩) নিয়ে এখানে কোনো রকম মাথা গুজার ঠাঁই করে নিয়েছেন গুলনাহার।

 কিন্তু আগুনে সব কিছু শেষ করে দিয়েছে তার। দাদীর সঙ্গে সন্তানেরা টেলিভিশন দেখতে যাওয়াতে কোনোরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে তারা।

আগুন লাগা প্রসঙ্গে গুলনাহার বলেন, ঘর তুলা থেকেই শত্রু। ভাত রেনদে (রান্না) চুলায় পানি দিইচি (দিয়েছি)। আগুন ক্যান লাগবে। মানশি (মানুষ) দিয়া আগুনে সব শ্যাষ করে ফ্যালাইচে।

‘ছোডো ছোডো মাইয়া, পুলাপান লইয়া এহন কই থাকুম। চোরে চুরি করলে কিছু থুইয়া যায়, আগুনে পুড়লে কিছু রাখে না’ বলেন গুলনাহার।

গুলনাহারের সঙ্গে তার শাশুড়ি নুরজাহানও বসবাস করেন। অনেক আগেই মারা গেছেন নুরজাহানের স্বামী। ঝিয়ের কাজ করেন তিনি। বুধবার নাতি নাতনিরে নিয়ে পাশের বাড়িতে টেলিভিশন দেখতে যাওয়ায় রক্ষা পায় সবাই।

নুরজাহান বলেন, স্বামী অনেক আগেই গেছে। ছেলেও মারা গ্যাছে ছয় মাস আগে। ঘর ভাড়া দেওয়ারে খ্যামতা (সাধ্য) নাই। রাস্তার পাশে কোরো রকম আছি। সেই ঘরটাও পুড়ে শ্যাষ হয়ে গেল। পরের বাড়িতে ওদের (নাতি-নাতিন) লইয়া টিবি (টেলিভিশন) না দেখলে ওরাও শ্যাষ হইতো।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।