ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অ্যাসল্ট রিভার ক্রসিংয়ে যুদ্ধ জয় সেনাবাহিনীর

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫
অ্যাসল্ট রিভার ক্রসিংয়ে যুদ্ধ জয় সেনাবাহিনীর ছবি: নাজমুল হাসান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী থেকে: শত্রুবাহিনী দেশের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। ভূমি দখল করতে করতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির গড়াই নদী পর্যন্ত চলে এসেছে তারা।



নদীর এ পাড়ে ঘাঁটি তৈরি করে দেশমাতৃকার ভূমি উদ্ধারে দৃঢ় সংকল্প বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশন, অন্যান্য ফরমেশন এবং বিমান বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই ভূমি পুনর্দখলে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু হয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে।

এ ধরনের একটি কল্পিত ঘটনাকে মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সেনাবাহিনীর শীতকালীন অনুশীলন। শত্রুবাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সেনারা আকাশ, নৌ ও স্থলপথে ত্রিমুখী অভিযান পরিচালনা করে।

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ডিনামাইটের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর শুরু হয় অনুশীলন ‘দুর্জয় বাংলা’। এতে প্রায় ৮ হাজার প্রশিক্ষিত সেনা অংশ নেন। অনুশীলন পরিচালনা করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ ইউসূফ।

অভিযানের শুরুতেই এমআই ১৭ ও বেল ২০৬ হেলিকপ্টার থেকে কমান্ডো বাহিনী ও দুটি সেনা পরিবহন উড়োজাহাজ এএন ৩২ থেকে প্যারাট্যুপার নামে। তারা শত্রুপক্ষের স্থান চিহ্নিত করে কমলা রংয়ের ধোঁয়া ছাড়ে। এই ধোঁয়া দেখে মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান এসে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে। এরপরই গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবর্ষণ শুরু হয় শত্রুপক্ষের ওপর।

কামানের গোলার সঙ্গে সঙ্গে শত শত সৈনিক স্পিডবোট, উভচর আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) করে পদাতিক সৈনিকরা নদীপার হয়ে শত্রুপক্ষের ওপর আক্রমণ শুরু করে। একটু পরই  অ্যাসল্ট ব্রিগেডের ১৭ ও ২২ পদাতিক রেজিমেন্টের সুসজ্জিত সেনাসদস্যরা দূরবর্তী তীরে আক্রমণ রচনার জন্য ট্রাইশার্ক বোট নামায় নদীতে।

১০ জন সেনাবহনে সক্ষম আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের অন্যতম আবশ্যিক সরঞ্জাম এই উভচর আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার। এগুলো ভূমিতে ঘণ্টায় ৮০ কিমি ও পানিতে ৩০ কিমি গতিতে চলতে সক্ষম।

অভিনব কৌশলে নির্মিত র‌্যাফটের সাহায্যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনটি মিডিয়াম ট্যাংক ও ব্রিজ নির্মাণের আবশ্যিক সরঞ্জাম পন্টুন নদীর দূরবর্তী তীরে নিয়ে যায়।

১৮টি সেলফ প্রপেল্ড গান সিস্টেম এবং ৬টি মাল্টি লঞ্চ রকেট সিস্টেম, যার প্রতিটিতে ৪০টি করে টিউব রয়েছে। এছাড়া সার্ভে কার্যক্রমে দক্ষতা বাড়াতে যুক্ত হয়েছে তিনটি অত্যাধুনিক ওয়্যাপেন লোকেটিং রাডার।

অ্যাসল্ট রিভার ক্রসিং প্রচলিত সামরিক অভিযানসমূহের মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী অপারেশন। কারণ যে কোনো পানি বাধাই স্বাভাবিক আভিযানিক চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। এ কারণে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর জন্য সম্মুখস্থ পানি বাধা অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও অগ্রাভিযানরত সেনাদলের জন্য এ বাধাগুলো বিশাল প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।

এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই মূলত বালিয়াকান্দির সোনাকান্দায় গড়াই নদীর তীরে এই অনুশীলনের আয়োজন করা হয়।

ত্রিমুখী আক্রমণের এক পর্যায়ে ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউসূফ যুদ্ধ পরিচালনা করতে সরাসরি রণক্ষেত্রে চলে যান উভচর যান নিয়ে। এভাবে ত্রিমুখী আক্রমণে শত্রুপক্ষকে পরাজিত করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

জয়ের পর ব্রিগেড কমান্ডার নদীর ওপর পারে মঞ্চে বসে অনুশীলন প্রত্যক্ষকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধ জয়ের খবর পৌঁছে। প্রধানমন্ত্রীও ফিরতি বার্তায় যুদ্ধ জয়ে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সেনাদের অভিনন্দন জানান।

এই অনুশীলনে অ্যাসল্ট ব্রিগেডের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল যশোর সেনানিবাসের ১০৫ পদাতিক ব্রিগেড। এই ব্রিগেডের অধীনে ২২ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট এবং ২৫ ইস্টবেঙ্গল অ্যাসল্ট ব্যাটালিয়ন হিসেবে গড়াই নদী অতিক্রম করে। অনুশীলনের সার্বিক পারাপার কার্যক্রম পরিচালনায় ছিল ৮ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন। এছাড়া ১২ ল্যান্সারের একটি স্কোয়াড্রন এবং ১৯ ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনে অংশ নেয়।

এতে ২৬ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি প্রত্যক্ষ ফায়ার সহায়তা এবং ২১ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি আকাশ প্রতিরক্ষা প্রদান করে। একই সঙ্গে প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়নের চৌকস দল, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের হেলিকপ্টার এবং বিমান বাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান এই অনুশীলনে অংশ নেয়।

নিজস্ব আর্টিলারি এবং বিমান বাহিনী কর্তৃক প্রদত্ত ফায়ার সহায়তা সম্মূখস্থ ব্রিগেডের অ্যাসল্ট ব্যাটালিয়ন ২০/২২টি অ্যাসল্ট বোটের মাধ্যমে আনুমানিক ৩০০/৪০০ মিটার বিস্তৃতি নিয়ে দুটি ওয়েভে অল্প সময়ে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে নদী অতিক্রম করে দূরবর্তী তীরে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত শত্রুর সম্মূখস্থ বাহিনীকে পরাজিত করে নিজস্ব অনুসরণকারী বাহিনীকে নিরাপদে পানি বাঁধা অতিক্রমের সুযোগ সৃষ্টি করে।   

এতে একটি ম্যাকানাইজড ব্রিগেড ও চারটি ম্যাকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট। এছাড়া চীনে তৈরি অত্যাধুনিক এমবিটি-২০০০ ট্যাংক ও রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক বিটিআর-৮০ মডেলের আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ব্যবহৃত হয়।  

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ, সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান ইনামুল বারী, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও যশোরের এরিয়া কমান্ডার মে. জেনারেল মতিউর রহমান।        
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।