ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘বাবার লাশ নদীতে ভাসতে দেখি’, ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫
‘বাবার লাশ নদীতে ভাসতে দেখি’, ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকার সিরাজ মাস্টার, খান আকরাম ও লতিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন শহীদ হাশেম আলী শেখের ছেলে সোবহান শেখ।

তিনি রাষ্ট্রপক্ষের ১৪ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

সাক্ষ্যে তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ায় আমার বাবাকে বাড়ী থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় রাজাকার সদস্যরা। পরে আমার বাবার লাশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার (১৫ জানুয়ারি) চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী এ কথা বলেন।

বাগেরহাটের কচুয়া থানার টেংরাখালী গ্রামের বাসিন্দা সোবহান শেখ (৫৫) বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১০ থেকে ১১ বছর। তখন আমি গরু ছাগল চড়াইতাম।

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলা অগ্রহায়ণ মাস শুরু হওয়ার দুই এক দিন পরে সকাল আনুমানিক ১০ থেকে ১১টার সময় চারজন রাজাকার আমাদের বাড়িতে আসে এবং আমার বাবাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। আমাদের পরিবারের কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন। ওই চারজন রাজাকারের মধ্যে আমি সুলতান ডাউয়া রাজাকারকে চিনতে পারি। ’

সাক্ষী সোবহান শেখ বলন, ‘রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমি কান্নাকাটি করতে করতে বাবার পিছু পিছু কচুয়া যাই।
রাজাকাররা আমাকে ক্যাম্পের বাহিরে বসিয়ে রেখে বাবাকে ভিতরে নিয়ে যায়। এক পর্যায় লম্বা কালোমত একজন রাজাকার আমাকে বলে যে এখানে কারফিউ দেয়া হয়েছে তুমি চলে যাও। এই বলে সে আমাকে আঘাত করে বের করে দেয়। আমি তখন সেখান থেকে নদীর ধারে এসে কান্নাকাটি করতে থাকি। এর কিছুক্ষণ পর আমি গুলির শব্দ শুনতে পাই। ’

সাক্ষী বলেন, আমার পরিচিত একজন আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। রাতের বেলা আমরা জানতে পারি যে, রাজাকার সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেন, সুলতান ডাউয়া, মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্য রাজাকারা আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। পরের দিন সকালে আমার ভগ্নিপতি শিখু শেখ ঘটনাস্থলে গিয়ে নদীতে ভাসমান বাবার লাশ নিয়ে আমাদের গ্রামে আসলে আমরা দাফন করি। ঘটনাস্থলে আমার বাবাসহ অন্যান্য শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ আছে উল্লেখ করে সাক্ষী তার জবানবন্দি শেষ করেন।

সাক্ষ্য গ্রহণে ট্রাইব্যুনালকে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর সায়েদুল হক সুমন।

এরপর সাক্ষী সোবহান শেখকে জেরা না করে ডেকলাইন ঘোষণা করেন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী আবুল হাসান। অন্যদিকে খান আকরাম হোসেনের আইনজীবী সরোয়ার হোসেন একটি প্রশ্ন করে তার জেরা শেষ করেন।

ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৫ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করে মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন।

আসামি সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ ও খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে গত ৫ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর ২০০৯ সালে নিমাই চন্দ্র দাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এই তিন আসামিসহ ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাটের আদালতে  মামলাটি দায়ের করেন। বাগেরহাটের আদালত এ মামলা ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়।   এরপর ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার শুরু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।