ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আমরা বীরের জাতি, কথা রেখেছি

মাহমুদ মেনন ও মহিউদ্দিন মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
আমরা বীরের জাতি, কথা রেখেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মাওয়া (খানবাড়ি) থেকে: পদ্মাসেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক বাধা এলেও সেসব উপেক্ষা করে এ কাজ শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ হাতে নিলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন দেওয়ার কথা বলে। হঠাৎ তারা পয়সা প্রত্যাহার করে নেয়।

পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তবে তারা প্রমাণ দিতে পারেনি। তখন কিন্তু বলেছিলাম, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, নিজেদের অর্থায়নেই এ সেতু নির্মাণ করবো। আমরা বীরের জাতি। আমরা আমাদের কথা রেখেছি। নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের উত্তর মেদেনীমণ্ডলের খানবাড়িতে আয়োজিত জনসভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। দুপুরে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এ সভায় যোগ দেন।

তিনি বলেন, আজ সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করলাম। এ সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ আরও সহজ হয়ে যাবে। ২০০১ সালেই আমরা এ কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সরকার এসে তা বন্ধ করে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী জনতার উদ্দেশে বলেন, ২০০৮ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়ী করেছেন, আমরা সরকার গঠন করেছি। এরপর পুনরায় সেতু নির্মাণের কাজের উদ্যোগ নিই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না, কেউ পারেনি। আমরা বিশ্বদরবারে মাথা উ‍ঁচু করে চলতে চাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক মুক্তির কাজ করছিলেন, তখনই তাকে সপরিবোরে হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমান সেই দোসরদের দেশে ফিরিয়ে আনে, মন্ত্রিত্ব দেয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সংসদে বসায়।

তিনি বিএনপির বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ১৯৯৬ সালে বিএনপিই ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল বলে দেড় মাসের মধ্যে খালেদাকে বিদায় করেছিল জনগণ। অথচ এখন তাদের কাছেই শুনতে হয় নির্বাচনের ভালোমন্দ। অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা হাতে নিয়েছিল, তাদের আবার বৈধতা কীসের। নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা ট্রাক চালকদের হত্যা করেছে, শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। মন্দির-গির্জা কিছুই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি, ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়েছে। খালেদা জিয়া তিন মাসে অফিসে বসে থেকে ৯৫ জনকে পুড়িয়েছেন। মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছেন খালেদা ও তার দলের ক্যাডাররা। তাদের আগুনে দগ্ধ অনেকে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এসব হত্যা-অগ্নিকাণ্ড যারা করেছে তাদের প্রত্যেকের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই, কেউই রেহাই পাবে না বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা মানুষের কল্যাণ করতে পারে না, ধ্বংস ডেকে আনে, অকল্যাণ করতে পারে।

তিনি সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, আজ হাতে হাতে মোবাইলে কে এনে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা দেশকে ডিজিটাল করেছি, দেশে ডিজিটাল সেন্টার থেকে ২০০ রকমের সুবিধা পাচ্ছে জনগণ। আওয়ামী লীগ মানুষের জন্যই কাজ করে। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এখন হাত পাততে হয় না। দারিদ্র্যের শিকার মানুষদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধী, গৃহহারা গরিবদের ভাতা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার সুবিধার জন্য বই কিনতে হয় না। কোনো শিশু ‍স্কুলের বাইরে থাকবে না। সবাই স্কুলে থাকবে।

তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগের আমলে ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করা হয়েছে। ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে, যেন সবাই কাজ করতে পারে। কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনা পয়সায় ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে। ডিগ্রি পর্যন্ত যেন মেধাবীরা লেখাপড়া করতে পারে সেজন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। বেকার যুবকরা বিনা জামানতে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। রাস্তা-ঘাট পুল ব্রিজ উন্নয়নে কাজ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত আমলের চিত্র তুলে ধরে বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকতে একজন দিনমজুর ২ কেজি চাল কিনতে পারতো না। কিন্তু এখন ৫-৬ কেজি চাল কিনতে পারে। বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাই চায়নি, তারা উৎপাদন আর উন্নয়ন করবে কীভাবে? তারা ষড়যন্ত্র করতেই থাকবে। তাদের থেকে সজাগ থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করেছি।

পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পে জমি হারাদের পুনর্বাসনের কাজ চলছে এবং এখানকার ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাজিরায় নতুন স্যাটেলাইট শহর গড়ে উঠবে। দু’পাড়ে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে।   সুন্দরভাবে এ এলাকার উন্নয়ন হবে। মানুষের দুঃখ কষ্ট থাকবে না। প্রত্যেক ‌উপজেলায় স্কুল-কলেজ করে দেবো, যেন ছেলে মেয়েরা ভালো লেখাপড়া শিখতে পারে।

তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, দাবি লাগবে না, আমরা জানি কোথায়-কী লাগবে, নিজেরাই করে দেবো। যা যা করণীয় তা আওয়ামী লীগ সরকার করে দেবে। আওয়ামী লীগ অন্তর থেকে এ দেশের মানুষকে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসা থেকেই উন্নয়ন করবে। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন, তাই তো উন্নয়ন করতে পারছি, সেবা করতে পারছি, পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে পারছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েছে। একাত্তরে তারা যা করেছে, এখনও জামায়াতকে নিয়ে তারা তা করছে। এতিমের টাকা নিয়ে মেরে খায়, কল্যাণ করবে কীভাবে?

তিনি বলেন, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। এসময় প্রত্যেকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকবে।

‘হায়েনার দল’ যেন এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এতে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী অ্যডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-আলম খান লেলিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফম ডা. দীপু মনি প্রমুখ।

এদিকে, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু ও জনসভাকে ঘিরে প্রাণের উচ্ছ্বাস দেখা যায় পদ্মাপাড় মাওয়ায়। পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের পর সবাই প্রধানমন্ত্রীর মুখে দু’টি কথা শোনার অপেক্ষায় খানবাড়িতে ভিড় জমান। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার জনতা। পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী দিনে কে না সাক্ষী হয়ে থাকতে চায়। সেজন্য জনতা ছুটে আসে শ্রীনগর, লৌহজং, সিরাজদিখান, কেরাণীগঞ্জ থেকে। আসে পদ্মার ওপারের জাজিরা, মেঘনার ওপারের গজারিয়া থেকেও। তাদের মুখে স্লোগান ছিল ‘পদ্মা সেতু দেশের উন্নয়নের প্রতীক’। প্রধানমন্ত্রীকে তারা বলেন ‘সেই উন্নয়নের পথপ্রদর্শক, পরিবর্তনের অগ্রদূত’। সভায় যোগ দেওয়া কারও হাতে ব্যানার, কারও হাতে ফেস্টুন দেখা যায়। সভায় তারা যোগ দেন ঢোল বাজিয়ে, বাদ্যের তালে তালে।

এর আগে, ‍দুপুরে মাওয়ায় পদ্মাপাড়ে প্রধানমন্ত্রী সুইচ টিপে উদ্বোধন করেন পদ্মার মূল সেতুর নির্মাণ কাজ। তার এ উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে গেছে পদ্মাসেতু নির্মাণের মূল কর্মযজ্ঞ। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামারে নদীর তলদেশে গভীর থেকে গভীরে প্রোথিত হচ্ছে পদ্মাসেতুর মূল পাইল। মাওয়া থেকে এক কিলোমিটার ভেতরে নদীর মাঝে এটি হতে যাচ্ছে সাত নম্বর পিলার। উদ্বোধনের আগেই নদীর মাঝে গিয়ে পিলারের স্থানটিও দেখে আসেন প্রধানমন্ত্রী।

তারও আগে, সকালে হেলিকপ্টারযোগে জাজিরা পৌঁছে সেখানে পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

** আর একটি অনন্য নজির স্থাপন শেখ হাসিনার
** বিএনপি পদ্মাসেতু নির্মাণ বন্ধ করেছিল
** শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন আমরাও পারি
** শত বাধার মুখেও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে তারা পারে
** নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করেছি
** প্রাণের উচ্ছ্বাস মাওয়ায়, সভামঞ্চে প্রধানমন্ত্রী
** স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণযজ্ঞ শুরু
** প্রাণের উচ্ছ্বাস পদ্মাপাড়ের মাওয়ায়
** শুরু হলো পদ্মাসেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞ
** গোটা দুনিয়ায় বাংলাদেশ তার সামর্থ্য জানান দিচ্ছে
** পদ্মাসেতু নির্মাণে সবার সহযোগিতা কাম্য

** এ যেন বিজয়ের পর আরেকটি বিজয়

** পদ্মাসেতুর নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
** দেশের নয়, আঞ্চলিক উন্নয়নও হবে
** মঞ্চের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী
** কোনো কারণ ছাড়াই তারা দুর্নীতির অভিযোগ আনে
** পদ্মাসেতুর নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
** জাজিরায় সুধী সমাবেশ চলছে

** ঝড়-ঝাপ্টা পেরিয়ে আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করেছি

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
এমএমকে/এমইউএম/এমএ/টিআই/এইচএ/এসএইচ/এএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।