ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চুকনগর গণহত্যা-২

‘রক্তের স্রোতে লাশ ভাসতি দেহিছি’

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
‘রক্তের স্রোতে লাশ ভাসতি দেহিছি’ ছবি: মানজারুল ইসলাম/বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনার ডুমুরিয়ার চুকনগর বধ্যভূমি থেকে ফিরে: ‘ওরা (পাকিস্তানি সেনারা) মানুষ না, মানুষ হলি কোনোদিন মানুষরি এইভাবে মারতি পারতো না! জানের মায়ায় যারা পালায় যাচ্ছিল, সেই সব মানুষরি ওরা পাহির মতো গুলি কইরে মারিলো। হাজার হাজার মানুষ মাইরে কয়েকজন ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

এরপর আমারে ডাইহে কয় ডাব খাওয়াইতে। নইলে মাইরে ফেলবে। আমি ভয়ে ডাব পাইরে খাওয়াইয়ে জানে বাঁচি। চোহের সামনে সেদিন দেহিছি রক্তের স্রোতে লাশ ভাসতি!’

চুকনগরে বর্বরোচিত গণহত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন চুকনগর বধ্যভূমির পাশের বাড়ির জব্বার মোড়ল (৯০)।

সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জব্বার জানান, বধ্যভূমি লাগোয়া মালতিয়া গ্রামে তার বাড়ি। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলির শব্দ শুনে তিনি রাস্তায় বের হন। দেখেন চুকনগরে বিভিন্ন জেলা থেকে ভারতে যাওয়ার জন্য আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর একনাগাড়ে চলছে গুলি। এ দৃশ্য দেখে ভয়ে তিনি পাথর হয়ে যান। এক সময় পাকিস্তানি সেনারা তাকে ডেকে নারকেল গাছ দেখিয়ে বলে, ডাব পেরে আনতে। মৃত্যু ভয়ে সেদিন তিনি একে একে অনেক গাছের ডাব পেরে পাকিস্তানি সেনাদের খাওয়ান।

জব্বার মোড়লের ভাষ্যে আরও জানা যায়, সেদিন মানুষ প্রাণের ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটেছিলেন। তবুও বাঁচতে পারেননি। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের।

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) চুকনগর বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে বসে কথা হয় স্মৃতিকাতর জব্বার মোড়লের সঙ্গে।

তিনি বলেন, সেদিন সবার গন্তব্য ছিলো সীমান্তের ওপারে। ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বাগেরহাট, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর থেকে লাখ লাখ মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন এখানে। তাদের কপালে আর ওপার যাওয়া হলো না।

জব্বার মোড়ল জানান, জীবিত অনেকের মতো তিনিও সেদিন মরদেহ সরিয়েছেন, মরদেহ গুণেছেন। দিয়েছেন সমাধি। দেখেছেন ভদ্রা নদীতে রক্তের স্রোত। যাতে ভাসছে নারী-শিশুসহ হাজারো মানুষ।

চুকনগর গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও বধ্যভূমির কেয়ারটেকার ফজলুর রহমান মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, হত্যাযজ্ঞের পর পুরো চুকনগর জুড়ে পড়েছিলো মরদেহ। ভদ্র নদীর পানিও ছিলো রক্তে লাল। যে কারণে এক-দেড় বছর ওই নদীর মাছও কেউ ধরেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
এমআরএম/এমজেএফ/এএসআর

** অরক্ষিত বধ্যভূমি, নেই গণহত্যার নামফলক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।