ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অনাদরে ১০ বধ্যভূমি, নেই সংরক্ষণের উদ্যোগ!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
অনাদরে ১০ বধ্যভূমি, নেই সংরক্ষণের উদ্যোগ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পেরিয়ে, তবে এখনো অরক্ষিতই রয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার নীরব স্বাক্ষী ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ১০ বধ্যভূমি। এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণে নেওয়া হয়নি সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ।



বছরের পর বছর অনাদরে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে অসামান্য ত্যাগের এ স্মারকচিহ্ন।

সচেতনতা ও উদাসীনতার অভাবেই অবহেলায় পড়ে থাকা পাকিস্তানিদের বর্বরতা ও নৃশংসতার এসব স্থানে আজো গড়ে উঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এসব বধ্যভূমিগুলো নিশ্চিহ্ন হবার হাত থেকে রক্ষা করার দাবি তুলেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, গফরগাঁওয়ের ১১টি বধ্যভূমির মধ্যে শুধুমাত্র লঞ্চঘাটা বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু এলাকাটি সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা পায়নি। বাকী ১০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনো।

অনাদরে পড়ে থাকা এসব বধ্যভূমিগুলো হচ্ছে- সুতার চাপর বাজার, নিগুয়ারী সাইদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প, প্রসাদপুর, ভারইল, কাওরাইদ-গয়েশপুর রেলব্রিজ, ফরচুঙ্গি-শিলা রেলব্রিজ, রসুলপুর, পৌর শহরের ইমামবাড়া, বারইগাঁও ও গন্ডগ্রাম। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মানুষকে এসব স্থানে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে পাকিরা।

লাশ মাটিচাপা দিয়ে রাখে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের পর অসংখ্য মানুষের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব বধ্যভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কোনটি আবার তলিয়ে যাচ্ছে নদীতে। কোনটি আবার ঝোঁপঝাঁড়ে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। কোনটি এখনো পর্যন্ত চিহ্নিতই করা হয়নি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা সদরের ফরচুঙ্গি-শিলা রেলব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে স্থানীয় নিরীহ মানুষজনকে নির্মমভাবে গুলি হত্যা করা হয়। এরপর হানাদাররা যেখানে লাশ ফেলতো সেখানে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলেও এ স্থানটি আজো চিহ্নিত করা হয়নি।

এসব বধ্যভূমি আজো সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সেলিম আহমেদ।

তিনি বলেন, দেশের জন্য যারা পাকিস্তানিদের হাতে জীবন দিয়েছেন। তাদের রক্ত মিশে গেছে সেইসব বধ্যভূমির মাটিতে। গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে তাদের স্মৃতি রক্ষার্থেই এসব বধ্যভূমিকে আর অবহেলা নয়। এবার সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। এসব স্থানে নির্মাণ করতে হবে স্মৃতিস্তম্ভ।

একই বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগামী প্রজন্মকে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে হলে অবশ্যই বধ্যভূমির স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখা জরুরি। অযতœ আর অবহেলায় থাকা এসব বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার জন্য আমি জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের কাছে দাবি জানিয়েছি। তারা এ দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। ’

জানতে চাইলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বাংলানিউজকে জানান, অরক্ষিত বধ্যভূমিগুলো সংস্কার ও চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অরক্ষিত বধ্যভূমিগুলোর বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেই এসব বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সরকার এ ধরণের একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।

একই রকম কথা জানান ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।