ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন করে গ্রাস হচ্ছে ওসমানী উদ্যান

মোস্তফা ইমরুল কায়েস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
নতুন করে গ্রাস হচ্ছে ওসমানী উদ্যান ছবি: দীপু মালাকার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সীমানা প্রাচীর ধরে এক সারিতে নষ্ট মোবাইল যন্ত্রাংশের দোকান। এর অন্য পাশেই বসেছে পান-সিগারেট ও খাবারের দোকান।

খোলা বাজারের মতোই চলছে বেচাকেনা। আবার এসবের আড়ালেই জমজমাট মাদকগ্রহণ, বিভিন্ন মাদক বিকি-কিনি, সঙ্গে জুয়াড়িদের আড্ডা।
 
রাজধানীর ওসমানী উদ্যানের চিত্র এটি।

গত মেয়াদে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক দফায় ওসমানী উদ্যান দখলমুক্ত করা হয়। এর সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসে। কিন্তু নতুন করে পুনরায় অবৈধ দখল হয়েছে, তাও অনেক দিন। যেন দেখার কেউ নেই।

এতে বিপাকে পড়ে যাচ্ছেন এখানে ঘুরতে আসা মানুষজন। ঢাকা শহরে একটু বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার অন্যতম এ পার্কটি এখন কেবলই গ্রাস হচ্ছে।

অবৈধ দখলে চলে যাওয়ার কারণে উদ্যানের পরিবেশও নষ্টের পথে। এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হলে উদ্যানের অর্ধেক সমস্যা কমে আসবে- বলছেন সচেতন নাগরিকরা।

সরেজমিনে ওসমানী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত চাঁদার বিনিময়ে নতুন নতুন দোকানপাট গড়ে উঠছে। যা ধীরে ধীরে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একদম চুপ। প্রত্যেক দোকান থেকে ছোট-বড় ভেদে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা তুলছে একটি চক্র। সেই চাঁদার ভাগ চলে যাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, থানা পুলিশ ও সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের পকেটে।

পার্কটির ভাসমান দোকানি ও বিভিন্ন মানুষের অভিযোগ, একটি চক্র গত প্রায় মাসখানেক ধরে উদ্যানের বিভিন্ন স্পটে দুই শতাধিক অবৈধ ভাসমান দোকান বসিয়েছে। সেসব ভাসমান দোকান থেকে দৈনিক তোলা হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদার অর্থ।

সচিবালয়ের বিপরীতে উদ্যানের গেট ধরে প্রবেশ করতেই হাতের বাম পাশে চোখে পড়ে বেশ কিছু চা ও ভাতের ভাসমান দোকান। দেখে মনে হতে পারে উদ্যানকে বাজারে পরিণত করা হচ্ছে। উদ্যানের ভেতরে ঢুকে যাওয়া রাস্তা ধরে একটু এগোলেই উঁচু জায়গায় বটগাছের নিচেই বসেছে ভাতের দোকানপাট।

দোকানদার গণি মিয়া বাংলানিউজকে জানান, দোকানপ্রতি দৈনিক আড়াইশ’ টাকা করে দিতে হয়। তবে তা বড়-ছোট ভেদে অবশ্য। বড় দোকানের জন্য আড়াইশ’ টাকা এবং ছোট-মাঝারি দোকান হলে এক থেকে দেড় শ’ টাকা পড়ে।

অপর এক ভাতের দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা প্রশাসন ও সিটির লোকজনদের ম্যানেজ করেই এসব দোকানপাট বসিয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি নিজে টাকা তোলেন না। এ জন্য রয়েছে কয়েকজন ব্যক্তি। তারাই নিয়মিত দুপুরের পর এসে চাঁদা তুলে নিয়ে যান।

সন্ধ্যার পর উদ্যানে অবস্থান করলে কোনো ধরনের সমস্যা হয় কি-না জানতে চাইলে আলমগীর নামে এক দোকানদার বলেন, ‘টেকা দেই আবার সমস্যা হইবো ক্যা’?
অর্থাৎ তারা টাকা দিচ্ছেন। হচ্ছে ব্যবসা।

প্রায় মাস দুয়েক আগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এর পরদিন থেকে উদ্যানের ভেতরে তারা বসতে শুরু করেছেন বলে জানালেন জাহাঙ্গীর নামে এক দোকানদার।

জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, বসার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় নেই। বিক্রি হোক আর না হোক, দিন শেষে একশ’ টাকা করে দিতেই হবে। এটি একদমই নির্ধারিত রেট।

উদ্যানের ভেতরে অবস্থান সম্পর্কে সাইনবোর্ডের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালে ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা এবং শীতকালে ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা উদ্যানের ভেতরে অবস্থান করতে পারবেন। নিয়মে থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপারেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমদ বাংলানউজকে বলেন, এ উদ্যান নিয়ে কোনো কমেন্টস করতে চাই না। অন্য যা কিছু বলার বলবো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপারেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাহ বাংলানউজকে বলেন, দোকান বসেছে বলে জানা নেই। আমরা তো প্রতিনিয়ত পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে উদ্যানের ভেতরে বসা অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করছি। কিন্তু তারপরও কেউ বসে থাকলে আবার অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এমআইকে/আইএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।